অপহৃত বাংলাদেশিদের হাতে লিবিয়ার সেই মূল অপহরণকারী নিহত!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৩৬:৫১,অপরাহ্ন ৩০ মে ২০২০ | সংবাদটি ৮১৭ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্কঃ
অপহৃত বাংলাদেশিদের হাতে লিবিয়ার সেই মূল অপহরণকারী নিহত হয়েছে। মূলত ওই অপহরণকারী নিহতের জেরেই ২৬ বাংলাদেশি অন্য অপহরণকারীদের হাতে এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হয়েছেন। শুক্রবার এ বিষয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিজদাহতে বৃহস্পতিবার অন্তত ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে অপহরণকারীরা।
ত্রিপলি হতে ১৮০ কি.মি. দক্ষিণের ওই এলাকায় সংঘটিত ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করছে দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস।
হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অনুসন্ধান চালিয়েছে লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস। ওই অনুসন্ধানে জানা যায়, লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনী অপহরণকৃত বাংলাদেশিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালালে অন্তত ২৬ বাংলাদেশি ঘটনাস্থলে নিহত হন। আক্রান্তদের মধ্যে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক বাংলাদেশির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হলে তিনি জানান যে, তিনি একজন লিবিয়ানের আশ্রয়ে আত্মগোপনে আছেন।
বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি দূতাবাসকে আরো জানান যে, ১৫ দিন আগে বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে কাজের সন্ধানে মানবপাচারকারীরা এসব বাংলাদেশিকে ত্রিপোলিতে নিয়ে আসার পথে তিনিসহ মোট ৩৮ জন বাংলাদেশী মিজদাহ শহরে নিকট লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনীর একদল দুষ্কৃতকারীর হাতে জিম্মি হন। মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে জিম্মিকারীদের হাতে অমানবিক নির্যাতনের একপর্যায়ে অপহৃতদের হাতে মূল অপহরণকারী লিবিয়ান নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নিতে লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনী তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। যাতে ঘটনাস্থলেই অন্তত ২৬ বাংলাদেশি নিহত হন। এসময় আরও ১১জন বাংলাদেশি হাতে-পায়ে, বুকে-পিঠে গুলিবিদ্ধ হন।
এ সংবাদ পেয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মিজদাহ হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এছাড়া, মৃতদেহগুলো মিজদাহ হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। আহতদের পরবর্তীতে দূতাবাসের সহায়তায় উন্নততর চিকিৎসার জন্য ত্রিপোলিতে অবস্থিত বিভিন্ন হাসপাতালে আনা হয়েছে। গুরুতর আহত তিনজনের শরীর হতে গুলি বের করার জন্য অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস লিবিয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং আইওএম লিবিয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখছে এবং তারা আহত ব্যক্তিদের জন্য সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করছেন।
মিশনের কর্মকর্তাগণ আহতদের কাছ থেকে ঘটনার বিশদ বিবরণসহ নিহতদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছেন। এ মর্মান্তিক যটনায় মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের সুচিকিৎসার নিশ্চিতকরণে দূতাবাসকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
ইতোমধ্যে দূতাবাস লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরো ঘটনার তদন্তসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার, দোষীদের যথাযথ শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে, লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজদাহের সুরক্ষা বিভাগকে অপরাধীদের গ্রেফতার এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সব পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস দ্রুততম সময়ে আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, মানবপাচারে জড়িতদের বিবরণ এবং লিবিয়ান সরকার কর্তৃক এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে।
উল্লেখ্য যে, মিজদাহ শহরে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান এবং এ অঞ্চলটি এখন দুটি শক্তিশালী পক্ষের যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে। কিছুদিন আগে ত্রিপোলি ভিত্তিক এবং ইউএন সমর্থিত জিএনএ সরকার এই অঞ্চলটি দখল করে নিলেও জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বাধীন পূর্ব ভিত্তিক সরকারি বাহিনী দু’দিন আগেও শহরটিতে বোমাবর্ষণ করেছে। ত্রিপোলি ভিত্তিক সরকারের এ অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ।
বর্তমানে ত্রিপোলি শহরেও বিরোধীপক্ষ মাঝেমাঝে বোমাবর্ষণ করে থাকে। দু’টি শক্তিশালী পক্ষ যুদ্ধরত থাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক নয়। এ কারণে অধিকাংশ দেশ তাদের দূতাবাস তিউনিসিয়াতে স্থানান্তর করলেও বাংলাদেশসহ মাত্র তিনটি দেশ তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এ প্রতিকূল অবস্থাতেও বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
পররষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার সব প্রকার মানব পাচারের সম্পূর্ণরূপে বিরোধী এবং মানব পাচার রোধে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যার ফলে বাংলাদেশ হতে মানব পাচারের পরিমাণ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ সমস্যাকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধিরসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একসাথে কাজ করা প্রয়োজন।