প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০৮:৩৫,অপরাহ্ন ২৭ জুন ২০১৮ | সংবাদটি ১৯১ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তরুণ লেফটেন্যান্ট কি নিয়ান লিন রাখাইনে শতাধিক সেনাসদস্য নিয়ে উড়ে যান। তখনও রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়নি। পরে এই অভিযানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে মিয়ানমারের সেনারা।
রাখাইনে যাওয়ার দিন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের তরুণ এই কর্মকর্তা ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। রাখাইনে অভিযান শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে ১০ আগস্ট তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘আমরা বিমানে, কেক খেতে রওয়ানা হয়েছি।’
তার এক বন্ধু ওই পোস্টের নিচে কমেন্টে জানতে চান, ‘তোমরা কি বাঙালির মাংস খেতে যাচ্ছ? অনেক বার্মিজ রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ অথবা ‘কালার’ হিসেবে ডাকে। লেফটেন্যান্টের জবাব ছিল, ‘যাই হোক না কেন।’ তার অপর একজন বন্ধু কমেন্টে বলেন, ‘কালারদের পিষিয়ে দাও। জবাবে নিয়ান লিন বলেন, ‘তাই করবো।’
সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা সংঘটিত করেছে; যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে জাতিগত নিধন বলে চিহ্নিত করেছে। তবে মিয়ানমার সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের গণহত্যা করেছে ও তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে ইতোমধ্যে অনেক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে রাখাইনে মিয়ানমারের ৩৩ এবং ৯৯ পদাতিক ডিভিশন কীভাবে তাদের অভিযান পরিচালনা করেছে। রয়টার্স দেখিয়েছে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গে সেনাবাহিনীর এলিট ফোর্সের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক।
রাখাইনে এবং বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। ব্যাপক পরিসরে চালানো এই অনুসন্ধানে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের বিরল স্বাক্ষাৎকার নিয়েছে রয়টার্স।
একই সঙ্গে হত্যাযজ্ঞ ও জ্বালাও-পোড়াওয়ে শিকার রোহিঙ্গা, প্রত্যক্ষদর্শী ও হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দেয়া ওই দুই এলিট পদাতিক ডিভিশনের সদস্যদের বক্তব্য নিয়েছে ব্রিটিশ এই বার্তাসংস্থা।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে; এমনকি বাহিনীর মুখপাত্রও গণমাধ্যমের সঙ্গে খুব কম কথা বলেন। কিন্তু মিয়ানমারে ফেসবুক ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়ায় রয়টার্স এমন বেশ কিছু সেনাসদস্যের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে; যেখানে সৈন্যদের জীবন-যাপন, চলাফেরা ও রাখাইনে কঠোর অভিযানের চিত্র পাওয়া গেছে।
সেনাবাহিনীর এলিট ডিভিশনের অন্তত দুই সদস্যের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া পোস্টে জাতিগত হিংসা-বিদ্বেষমূলক পোস্ট দেখা গেছে।
৩৩ পদাতিক ডিভিশনের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কি নিয়ান লিন রয়টার্সকে বলেন, সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া ছিল ন্যায়সঙ্গত। কারণ, বাঙালি সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছিল সৈন্যরা।
‘তারাই প্রথমে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয়। আমরা অভিযান শুরুর পর পুরো গ্রামবাসী পালিয়েছে।’ তবে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ড কিংবা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং দেশটির সরকার রয়টার্সের কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি। তবে অতীতে রাখাইনে জাতিগত নিধন অভিযান চালানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার বলছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দমনে বৈধ অভিযান পরিচালনা করেছে নিরাপত্তাবাহিনী।
মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দেশটির পুলিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ করছে। রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার যে অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে মন্ত্রণালয়।