ভারতীয় মুদ্রার রেকর্ড দরপতন, বাড়ছে বাংলাদেশি টাকার মান
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২০:২৮,অপরাহ্ন ২৮ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৮০২ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্কঃ
আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়ছে ভারতীয় মুদ্রা। এই আগস্টে রুপির দাম এখনও পর্যন্ত পড়েছে গড়ে ২.৩ শতাংশ। যা গত ৬ বছরে একটি নজির। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, গত অক্টোবরে রুপির মূল্যের যে হাল হয়েছিল, এইভাবে চললে বছরের শেষাশেষি রুপি প্রায় সেই জায়গাতেই পৌঁছে যাবে। এক মার্কিন ডলার কিনতে তখন সাড়ে ৭২ টাকা খরচ করতে হবে বলে পূর্বাভাস সিঙ্গাপুরের সমীক্ষক সংস্থা ‘নোমুরা হোল্ডিংসে’র।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুপির দামের অবনমনের কারণগুলির মধ্যে অন্যতম ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির গতি শ্লথ থেকে শ্লথতর হয়ে পড়া। তাঁদের ধারণা, গত চারটি ত্রৈমাসিকের মতো সদ্য শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকেও ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির গতি শ্লথ হবে। তার আভাস ইতিমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে অটোমোবাইল শিল্প থেকে শুরু করে বস্ত্রশিল্পে। ভারতের মানুষের হাতে অর্থ নেই, চাকরির অনিশ্চয়তা চরমে পৌঁছেছে বলে মানুষ সুযোগ পেয়েও পণ্যাদি কেনার উৎসাহ পাচ্ছেন না। ফলে, বিক্রি হচ্ছে না গাড়ি। গাড়িশিল্পের করুণ অবস্থা।
শুধু তাই নয়, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির এই হাল দেখে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও একটু একটু করে হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন। দেশটির শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা গত জুলাই পর্যন্ত ৩৮০ কোটি ডলার অর্থ তুলে নিয়েছেন। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২৭ হাজার ২৪৪ কোটি।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চীনা মুদ্রা ইউয়ানের তেজি হয়ে ওঠাও টাকার দাম পড়ার অন্যতম কারণ। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ থেকে অস্থিরতা শুরু হয়েছে মুদ্রাবাজারে। এতে ডলারের বিপরীতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মুদ্রার দরপতন ঘটছে।
ভারতীয় মুদ্রা রুপির রেকর্ড দরপতন ঘটায় কাছাকাছি চলে আসছে বাংলাদেশি টাকা। গত রবিবার পর্যন্ত ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল ৮৬ রুপি, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ১০০ রুপির দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকার সামান্য বেশি। আবার লেনদেন হুন্ডির মাধ্যমে হলে এর বেশিও মিলছিল।
বিশ্বে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে যে ওঠানামা চলছে তাতে বাংলাদেশি টাকা ডলারের বিপরীতে বেশি দৃঢ়তা দেখাতে পেরেছে বলেই রুপির তুলনায় এর দর বেড়েছে। গত সোমবার ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দাম কমে হয় ৭২ দশমিক ০৮ রুপি। আগের দিনের চেয়ে দর কমে ৪২ পয়সা। গত শুক্রবার প্রতি ডলারে পাওয়া গেছে ৭২ দশমিক ২৫ রুপি, যা ২০১৯ সালের সর্বনিম্ন দর। এর বিপরীতে প্রতি ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ৮৪ দশমিক ৫০ টাকা।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল ভারতে মুদ্রার দাম কমছে এমনটা নয়, সারা বিশ্বেই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কমছে মুদ্রার দাম। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে গত সোমবার চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দাম ১১ বছরে সর্বনিম্ন হয়। মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ভারতে রুপির মান নিম্নমুখী হতে শুরু করে। বিপরীতে টাকার মূল্যমান বাড়তে থাকে। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও সংকট, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে রুপির এই দরপতনে বাংলাদেশি টাকার মান বেড়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশি ১০০ টাকায় সমান ভারতীয় ১০০ রুপি পাওয়া যেত। এরপর টাকার মান কমতে থাকে। এ সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দাম ৫ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল, অথচ সেই একই সময়ে বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে রুপির পতন হয়েছে যৎসামান্য। পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যটা ডলারে হয় বলেই রুপির পতনের প্রভাবটা সীমিত হবে।
তবে রুপির রেকর্ড দরপতন হলেও বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোল ও বনগাঁয় মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের মালিকরা হঠাৎ করে সিন্ডিকেট করে ভারতীয় রুপির দর বাড়িয়ে দিয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার বাংলাদেশি ১০০ টাকার বিনিময়ে ভারতীয় ৮৪.৫০ রুপি দেওয়া শুরু করেছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে ১০০ টাকায় ৮৬ রুপি পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকা শক্তিশালী হলে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি আরো বাড়বে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে যারা ডাক্তার দেখাতে, অস্ত্রোপচার করাতে, বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে ভারতে যাবে তাদের জন্য এটা বড় সুখবর, কারণ টাকা বদলানোর পর তাদের হাতে নগদ রুপি এখন অনেক বেশি আসবে।