স্বপ্নচারী যুবকদের আস্থার ঠিকানা ফ্রান্সে বাংলাদেশী শ্রমিক গ্রুপ
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৩১:৩০,অপরাহ্ন ০৬ অক্টোবর ২০২১ | সংবাদটি ৭৯৯ বার পঠিত
শাবুল আহমেদ :
ফ্রান্সে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সেবার ব্রত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে ফ্রান্স বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক গ্রুপ (এফবিএসজি)। প্রবাসীদের আত্মউন্নয়ন, নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা নিরসনে বিনামূল্যে সেবামূলক সহযোগিতার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান এফবিএসজি।
প্যারিসের লাকর্নবে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু ২০১৮ সালের এপ্রিলে।ফ্রান্সে অবস্থিত প্রবাসী কমিউনিটিদের সহযোগিতার প্রত্যয়ে প্রাথমিক পর্যায় শহরের বিভিন্ন অলিতে-গলিতে, পার্কে বসে সিভি-মোটিভেশন লেটার, ফর্ম ফিলাপ তৈরিহ স্বদেশী মানুষের বেকারত্ব দূর করণ, নবাগতদের সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন প্রদান ও কর্মস্থলে ঘটিত দৈনন্দিন সমস্যা সমাধান ইত্যাদি বিষয়য়াদি নিয়ে সেবা কার্যক্রম শুরু করেন এফবিএসজি’র কর্ণধার আবু হাসান।
এভাবে একাই তার পথচলা শুরু। এরপর ধীরে ধীরে অনেকেই যুক্ত হতে থাকেন সেবার এ প্লাটফর্মে। যার ফলশ্রুতিতে গড়ে ওঠে ‘ফ্রান্সে বাংলাদেশী শ্রমিক গ্রুপ’ (FBSG) নামক এ সংগঠন। এটি ফরাসি প্রশাসনে নিবন্ধনকৃত একটি বৈধ সংগঠন।
সময়ের পরিক্রমায় বাড়তে থাকে তাদের সেবার মান ও পরিধি। বর্তমানে দক্ষতা সম্পন্ন নিবেদিত প্রাণ ২০ জন সেচ্ছাশ্রমী রয়েছেন এই সংগঠনে।
এছাড়া সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য রয়েছে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরি কমিটি।
প্রতিনিয়তই নতুন ও দক্ষ সেচ্ছাসেবক বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে নিত্য নতুন কার্যক্রম। সকল সেচ্ছাশ্রমী এখানে একটি চুক্তিপত্রে শ্রম দিয়ে যান, যা প্রতি সপ্তাহের যে কোনো দিন তিন ঘন্টা করে হয়ে থাকে।
প্রতিষ্ঠানের চলতি সেবা সমূহের মধ্যে- Auto entrepreneur সোসাইটি খোলা কিংবা বন্ধ করা, ফরাসি ভাষা শিক্ষা প্রদান, কোড দো লা রুত শিখানো ও ড্রাইভিং বিষয়ে গাইড লাইন প্রদান, চাকরি খুজে পেতে সাহায্য করা, CAF, Pôle emploi, Mission local এ নাম নিবন্ধন করে দেয়া ও সরকারি ভাতা পেতে অধিকার নিয়ে সহযোগিতা প্রদান। এরই ধারাবাহিকতায় খুব অল্প সময়ে এফবিএসজি ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে আশাজাগানিয়া সাড়া ফেলে। সামান্য সংখ্যক সেচ্ছাসেবী নিয়ে যাত্রারাম্ভ এফবিএসজি’র ব্যাপ্তি ও প্রসার ক্রমাগত বেড়ে চলছে।
সম্প্রতি কাজের পরিধি বেড়ে গেলে বাঙালি অধ্যুষিত প্যারিসের সারসেলে অফিসের নতুন একটি শাখা চালু করা হয়। আরো বেশ কিছু শাখা-প্রশাখা বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
অদম্য ইচ্ছা, সততা-নিষ্ঠা এবং মানবিকবোধের মাধ্যমে অতি অল্প সময় আবু হাসান একজন উদ্যোক্তা এবং প্যারিসের অন্যতম সংগঠন তথা এফবিএসজি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হয়ে ওঠেন।
আবু হাসানের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সুপাতলা গ্রামে। সেখানেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ১৬ বছর বয়সে তিনি ফ্রান্সে আসেন। পড়াশোনা শেষ করে প্রবেশ করেন চাকুরী জীবনে। বর্তমানে তিনি একটি রেস্টুরেন্টে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি দক্ষতা ও মানবিকবোধ সম্পন্ন একঝাঁক সেচ্ছাসেবী নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন এফবিএসজি।
সামাজিক সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানের দুটি শাখায় পর্যায়ক্রমে গড়ে প্রতিদিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শতাধিক মানুষকে। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশী নয়, অন্যান্য কমিউনিটির মানুষও এই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত সহায়তা পেয়ে থাকছেন।
গত সাড়ে তিন বছরে এফবিএসজি থেকে সেবা নিয়েছেন প্রায় ৬ হাজার মানুষ।
একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ফ্রান্সে আবু হাসানের একটা আলাদা সুখ্যাতি গড়ে ওঠছে।
ইতোমধ্যে তাঁর সাফল্যের পালকে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি। সামাজিক সেবার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও তিনি সম্পৃক্ত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি ফ্রান্সের সুপরিচিত এফবিএসজি ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
তৃতীয় বাঙলা ডট কমের সঙ্গে আলাপকালে এফবিএসজি’র কর্ণধার ও সভাপতি আবু হাসান বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের শুরুর দিকটা ছিল এক কঠিন অধ্যায়। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায় বিশাল অর্থের প্রয়োজন দেখা দেয়। সঙ্গতকারনে এরকম অলাভজনক একটি সংগঠনে সম্পৃক্ত হতে সবাই ভয় পেয়েছিল। তথাপি আমি হাল ছাড়িনি, আমার ভেতরকার ইচ্ছাশক্তিই ছিল মূল সম্বল। সর্বদা মানুষের জন্য কিছু করে যাওয়া আমাকে তাড়িত করতো। সেই প্রেরণা থেকে ভেবেছি- একদিন এই শহর, দেশ, তথা ধরিত্রীতে আমি না থাকলেও কর্মের মধ্যে হয়তো আমার নাম বেঁচে থাকবে।’
ভবিষ্যতে সামাজিক সেবার মান কিভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে তাদের নতুন কিছু পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেবার নামে কতিপয় মানুষ চারিদিকে রমরমা ব্যবসা শুরু করেছেন। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এইসব সার্ভিস সমূহ বিনামূল্যে প্রদান করা। তিনি বলেন, যদিও এরকম নীতিতে অফিসের ব্যয় চালানো কষ্টসাধ্য তবুও আমরা আমাদের নীতিতে অটুট থেকে সেবা দিয়ে যাব। যেদিন কোনো সার্ভিসে এক পয়সা চার্জ বসাতে হবে, সেদিনই এই অফিস ফেইসবুকে গ্রুপ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হবে।
প্রাসঙ্গিক আলাপকালে আবু হাসান বলেন, অফিসের প্রতি মাসের ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ যা আসে তার অর্ধেক আমি নিজে প্রদান করি, আর অবশিষ্ট অংশ আমাদের কিছু নিত্যশুভার্থী ও সেচ্ছাশ্রমীরাই বহন করে থাকেন।
প্রতিষ্ঠানের ভূয়সী প্রশংসা করে ফ্রান্সে বসবাসরত বাঙালি কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ এফবিএসজি’র অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা জানান।
তাদের মতে- চলমান কার্যক্রমের সফলতার মাধ্যমে বিভিন্ন দিক অনুশীলন করে ভবিষ্যতে বাঙালিরা আরো অনন্য উচ্চতায় আরোহণ করতে পারে।
প্যারিস-বাংলা প্রেস ক্লাব ফ্রান্সের সভাপতি এনায়েত হোসেন সোহেল বলেন, বাংলাদেশী কমিউনিটির উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে এফবিএসজি বিনামূল্যে যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই অসাধারণ এবং প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন, স্বদেশীদের উন্নয়নে ফ্রান্স তথা ইউরোপে এরকম সংগঠন গড়ে উঠুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।।