লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি নিহত: এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু আর নয়
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:১৩:৫১,অপরাহ্ন ৩০ মে ২০২০ | সংবাদটি ৫৭৭ বার পঠিত
সম্পাদকীয়
লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে মিজদা শহরে গত বৃহস্পতিবার সকালে এক মানব পাচারকারীর সহযোগী ও আত্মীয়-স্বজনদের নির্বিচারে গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অভিবাসন প্রত্যাশী ২৬ বাংলাদেশি। এ সময় গুলিতে আহত হয়েছেন আরও ১২ জন।
সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী দলের প্ররোচনায় মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবৈধ পথে পাড়ি জমাতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি নিজেদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। এ প্রবণতা বন্ধ হওয়া জরুরি। বিদেশ-বিভুঁইয়ে কোনো বাংলাদেশি যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর শিকার না হন, সেজন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষ করে, অবৈধ মানব পাচার চক্রের শেকড় সমূলে উপড়ে ফেলার ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেয়া চলবে না। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন করতে হবে, যাতে তারা প্রলোভন ও মিথ্যা আশ্বাসে অবৈধ কোনো প্রক্রিয়ায় কর্মসংস্থানের উদ্দেশে বিদেশে পাড়ি না জমান|
মানব পাচারের মতো অপরাধ রোধে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, তেমনি বিদেশ গমনেচ্ছুদেরও সতর্ক ও সচেতন হওয়া জরুরি। কাজটি আপাতদৃষ্টিতে কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। আমাদের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পুরো অভিবাসন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু পরিকল্পনার আওতায় এনে সরকারের উচিত সবকিছু ঢেলে সাজানো।
দুঃখজনক হল, বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশিরা প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন; মারাও যাচ্ছেন। এতে বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তি ও তার পরিবারই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, দেশও অপরিমেয় ক্ষতির মুখে পড়ছে। অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান ব্যাপক। জনশক্তি রফতানি খাতে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দূর করা গেলে অবৈধ পন্থায় বিদেশ গমনের প্রবণতা যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং তা হবে দেশের জন্য কল্যাণকর।
মানব পাচার মূলত আন্তঃদেশীয় সমস্যা। কোনো দেশের একার পক্ষে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। মানব পাচার প্রতিরোধে জনশক্তি রফতানিকারী, ট্রানজিট ও জনশক্তি গ্রহণকারী দেশগুলোর একযোগে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
অতীতে থাইল্যান্ডের অরণ্যে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের গণকবর আবিষ্কৃত হলে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ শুরু হয়েছিল। উল্লেখ্য, সে সময় মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকেও অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের উদ্ধার করা হয়েছিল। দেশে বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার পাশাপাশি চলমান শ্রমবাজারগুলোয় নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা।
প্রতারক মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে মানুষ যে শুধু সর্বস্বান্তই হচ্ছে না, মৃত্যুমুখেও পতিত হচ্ছে- লিবিয়ার মিজদা শহরে ২৬ বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনা তারই প্রমাণ। দেশে বেকারত্বের হার বাড়ছে। বৈধভাবে বৈদেশিক শ্রমবাজারে আমাদের প্রবেশ যাতে সহজ হয়, সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। একই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।