নেদারল্যান্ডসে হিমালয়সম শ্রদ্ধায় বিদেশীদের ‘বঙ্গবন্ধু’কে স্মরণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪১:১২,অপরাহ্ন ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ২৫৯ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্কঃ
নেদারল্যান্ডসে বিপুল সংখ্যক কূটনীতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন। গত ২৮ আগস্ট ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশ দূতাবাস দি হেগ কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথমবারের মত আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনী “বঙ্গবন্ধুঃ ইন রিমেমব্রেন্স” – এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাঁরা তাঁদের এ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরান, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া, কসোভো, নিকারাগুয়া, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, আফগানিস্তান, জর্জিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সুদান, ভ্যাটিকান, এর রাষ্ট্রদূতগণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ান ফেডারেশন, স্পেন, অস্ট্রিয়া, পানামার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এর ট্রাস্ট ফান্ড ফর ভিকটিমস এর বোর্ড চেয়ারম্যান ফেলিপ্পি মিচেলিনি ও অন্যান্য বোর্ড মেম্বার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিগণ, স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী, ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীসহ প্রায় শতাধিক অতিথি উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দি হেগ-এর প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র মান্যবর রবীন বলদেব সিং এবং ডিপ্লোম্যাটিক কোরের ডীন তথা নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত নিকারাগুয়ার মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব কার্লোস জে আরগুয়েলো গোমেজ অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলালসহ আনুষ্ঠানিকভাবে উক্ত চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
শান্তি ও ন্যায় বিচারের শহর হিসেবে খ্যাত দি হেগ এর বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক প্রথমবারের মত আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জনাব কাইয়ূম চৌধুরী, সর্বরী রায় চৌধুরী, মূর্তজা বশীর, আব্দুস সাত্তার, জামাল আহম্মেদ প্রমুখের ৩০টি চিত্রকর্ম নিয়ে উক্ত প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় বুড়িগঙ্গা আর্টস এ্যান্ড ক্র্যাফটস, ঢাকা- এর পৃষ্ঠপোষকতায়।
অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রদূত মান্যবর ভেনু রাজামনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী হিসেবে অভিহিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশের স্বাধীন হবার মূহূর্তে তাঁর নিজের স্মৃতিচারণ করে।
মাহেন্দ্রক্ষণটিকে “জয় বাংলা” ক্ষণ হিসাবে অভিহিত করে জানান যে তিনি তখন মাত্র ১১ বছর বয়সের এক কিশোর। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনাকে ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করে উক্ত হত্যাকান্ড পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর অপর কন্যা শেখ রেহানা-কে ভারত সরকার কর্তৃক আশ্রয় প্রদানের বিষয়টিও স্মরণ করেন।
ভারতের প্রাক্তন মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মূখার্জীর প্রেস সেক্রেটারী হিসেবে কাজ করাকালীন সময় প্রসঙ্গে বলতে যেয়ে সমগ্র ভারতে এমনকি সারা পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধুকে কত ভক্তিভরে স্মরণ করা হয় তাও উপস্থিত সুধীমন্ডলীর সামনে তুলে ধরেন। বাংলাদেশের শান্তি প্রিয় জনগণের প্রশংসা করে তিনি সকলকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণের অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত রাজামণি তাঁর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শনের স্মৃতি বর্ণণাকালে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। দি হেগ এর প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র মান্যবর জনাব রবীন বলদেব সিং তাঁর বক্তব্যে কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে করা উক্তি “আমি হিমালয় পর্বত দেখি নাই; কিন্ত আমি শেখ মুজিব-কে দেখেছি।
ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় তিনিই হিমালয়। এভাবেই আমার হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে” দর্শক শ্রোতাদের পাঠ করে শোনান। তিনি তাঁর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নিজেকে জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে গভীর ভালোবাসা তার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বর্ণণা করেন।
তিনি আরও জানান যে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর হিমালয়সম বঙ্গবন্ধু যদিও স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন তাসত্ত্বেও তিনি জনগণের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্যমণি হিসেবে রয়ে গেছেন।
প্রদর্শনীতে অন্তর্ভুক্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতির প্রতি ঈঙ্গিত করে তিনি বিদ্রোহী কবি রচিত ‘সাম্য’ কবিতাটি পাঠ করে বঙ্গবন্ধুর সাম্যবাদ এবং একতাবদ্ধতার বিষয়টি সম্মানিত উপস্থিতির সন্মুখে তুলে ধরেন।
ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জনাব গারবেন ডি জং তাঁর বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সাধারণ মানুষের যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রত্যক্ষ করেছেন তা তুলে ধরেন। এছাড়া, তিনি ঢাকাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বঙ্গবন্ধুর চিত্রকর্মের সংগ্রহশালার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ডিপ্লোম্যাটিক কোরের ডীন রাষ্ট্রদূত জনাব কার্লোস জে আরগুয়েলো গোমেজ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে এধরণের চমৎকার একটি চিত্র প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস-কে অভিনন্দন জানান।
জনাব গোমেজ বাংলাদেশের হিমালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-কে জানার সুযোগ করে দেবার জন্য রাষ্ট্রদূত বেলালের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত বেলালের বক্তব্যর সাথে একমত পোষণ করে জনাব গোমেজ জানান যে জনতুষ্টিবাদ মতবাদে আচ্ছন্ন বর্তমান পৃথিবীর নানামূখী সমস্যা সমাধানে বঙ্গবন্ধুই হতে পারতেন উত্তম ব্যক্তিত্ব।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথমবারের মত আয়োজিত উক্ত প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব শেখ মুহাম্মদ বেলাল অনুষ্ঠানের শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং উপস্থিত সুধীমন্ডলীকে বঙ্গবন্ধুর বর্ণীল ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদানপূর্বক দেশের মানুষের কল্যাণে তাঁর অপরিসীম ত্যাগের বিষয়টিও সকলের সন্মুখে তুলে ধরেন।
বিশ্বের মহান নেতাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর তুলনা করে রাষ্ট্রদূত বেলাল আরও জানান যে মানুষের প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বে অদ্বিতীয়। নিজ মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসাকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র দুর্বলতা হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের পরিব্যাপ্তি এত ব্যাপক যে তা এরকম একটি সীমিত আয়োজনের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান যে বাংলাদেশের মানুষ ভালোবেসে বঙ্গবন্ধুকে যে ‘অমরত্বের শৈশব’ প্রদান করেছে তা চিরন্তন এবং নিবিড় গবেষণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে এই মহান ব্যক্তিত্বকে আরো ভালোভাবে জানা সম্ভব হবে।
বুড়িগঙ্গা আর্টস এ্যান্ড ক্র্যাফটস, ঢাকা- এর কিউরেটর জনাব রফিক সুলায়মান বাংলাদেশের সমসাময়িক চিত্র কলার বিবর্তন এবং বর্তমান সময়ের চিত্র শিল্পীরা কিভাবে সমসাময়িক চিত্র কলাকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছেন সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করেন। আমাদের জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এই অভিনব প্রয়াস গ্রহণের জন্য তিনি দূতাবাস-কে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
দিনের শুরুতে দূতাবাস পরিবার এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির শিশুদেরকে নিয়ে একটি আর্ট ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়। ঢাকা থেকে আগত চিত্র শিল্পীদের দ্বারা পরিচালিত উক্ত আর্ট ক্যাম্পে শিশুরা তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি এবং সৃজনশীল চিত্র কর্মের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে।
আর্ট ওয়ার্কশপ এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠান – দুটি পর্বই সঞ্চালনা করেন মান্যবর রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী ডঃ দিলরুবা নাসরীন।