আগের রূপে লন্ডনের ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সেন্টার
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩১:১২,অপরাহ্ন ২২ ডিসেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ৩৯৯ বার পঠিত
আলী বেবুল, লন্ডন থেকে
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি এলাকায় ঐতিহাসিক ভবন বাংলাদেশ সেন্টারের অবস্থান। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে বাংলা শিক্ষা ও বাংলা সংস্কৃতি চর্চা, অনুবাদ সেবা, অভিবাসন সেবা, পুলিশ ও আইনি বিষয়ে পরামর্শ সেবা দেওয়া হতো এখানে। বাংলাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা আপত্কালে নামমাত্র খরচে এ সেন্টারে অবস্থানের সুযোগ পেতেন।
সংস্কারের অভাবে ২০১০ সালের দিকে ঐতিহাসিক ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় স্থানীয় কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ ভবনটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। বিষয়টি একপর্যায়ে মামলায়ও গড়িয়েছিল। সেন্টারের ব্যবস্থাপনা কমিটি সেই মামলা মোকাবিলা করেছিল। ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ভবনটির প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অবশেষে রোববার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের মাধ্যমে পুনঃ উদ্বোধন করা হলো ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সেন্টারের।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম এর পুনঃ উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ সেন্টারের সদস্য ও বাংলাদেশি কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মুখর ছিল এ আয়োজন। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ সেন্টারের পুনঃ উদ্বোধনের মূল আয়োজন। দুটি ভিন্ন প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেন্টারের প্রতিষ্ঠা, ঐতিহ্য ও কার্যক্রমের পাশাপাশি সংস্কারকাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়।
আলোচনা পর্বে সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা নবাব উদ্দিন বাংলাদেশ সেন্টারের গুরুত্ব ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এ সেন্টারকে বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া। হাইকমিশনারকে তিনি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে এ সেন্টারের যে অবদান, তার স্বীকৃতির জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে লিখবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেন্টার ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’খ্যাতি পাওয়ার যোগ্য। এ ছাড়া ‘ব্রিটিশ হেরিটেজ বিল্ডিং’ হিসেবে এ ভবনের জন্য ‘ব্লু ফ্ল্যাগের’ আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সেন্টার যাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সেবাগুলো চালু রাখে, সেই অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশ সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সেন্টারের মুহিবুর রহমান, মামুনুর রশীদ, শাহানুর খান, কবির উদ্দিন, মানিক মিয়া, গুলনাহার খান, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার আহবাব হোসেন, চিকিৎসক জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার, ইয়াউর খান, মো. মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ জুবায়ের প্রমুখ।
বক্তারা বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। স্মরণ করেন বাংলাদেশ সেন্টার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের। অভিজাত রূপে বাংলাদেশ সেন্টারের আবির্ভাব বাংলাদেশিদের জন্য বিশাল গৌরবের বলে মনে করেন তাঁরা। ঐতিহ্য ধরে রেখে এ সেন্টার আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে, এটাই তাঁদের প্রত্যাশা। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন।
লন্ডনের কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি বরোর ২৪ পেমব্রিজ গার্ডেনসে অবস্থিত ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সেন্টার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এ ভবনের নাম। স্বাধীনতাসংগ্রামে যুক্তরাজ্যপ্রবাসীদের অবদানের স্মারক বহন করছে এটি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গঠনে প্রবাসীরা এ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এ সেন্টারেই বাংলাদেশের দূতাবাস চালু করা হয়। ভারতের পর বহির্বিশ্বে এটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম কোনো দূতাবাস।
ব্রিটিশ হেরিটেজ বিল্ডিং হওয়ার কারণে বাংলাদেশ সেন্টার ভবনের সংস্কারকাজ ছিল বেশ কঠিন ও ব্যয়বহুল। ভবনের কোনো রূপ পরিবর্তন ছাড়াই এটি মেরামত করতে হয়েছে। সংস্কারের জন্য যে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল, সে কোম্পানিই সংস্কারের পুরো খরচ দিয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ পাউন্ড। বিনিময়ে তারা ১৪ বছর সেন্টারের ওপরের তিনটি তলা ব্যবহার করবে। এ সময়ে তারা সেন্টারকে নির্ধারিত হারে মাসিক ভাড়াও প্রদান করবে। আর নিচতলায় চলবে বাংলাদেশ সেন্টারের কার্যক্রম।