ফ্রান্সে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৩২:২৯,অপরাহ্ন ২৬ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৪৬২ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্কঃ
প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রথমবারের মত সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন করেছে। এই উপলক্ষে প্যারিসস্থ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-এ ডিফেন্স উইং, বাংলাদেশ দূতাবাসের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় একটি সংবর্ধনাঅনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত, প্রতিরক্ষা এটাচে, ফ্রান্স সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাবৃন্দ, পুলিশ, সুশীল সমাজ এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গসহ প্রায় দুইশত অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মে ২০১৯ তারিখ হতে ফ্রান্সের প্যারিসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রতিরক্ষা শাখার কার্যক্রম শুরু হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোহসীন, এসজিপি, এনডিসি, পিএসসি প্রথম প্রতিরক্ষা এটাচে হিসাবে নিযুক্ত হন।
ডিফেন্স এটাচে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসীন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে ফ্রান্স ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপর ডিফেন্স এটাচে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র বাঙ্গালী মুক্তিকামী মানুষ যখন সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাদের সাথে সশস্ত্র বাহিনীর বাঙ্গালী সদস্যগণও যোগ দেন। ২১ নভেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স প্রথম বারের মত কনভেনশনাল সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনী গঠন করে একযোগে দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে সুসংগঠিত আক্রমণ রচনা করে, যার ফলশ্রুতিতে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। ডিফেন্স এটাচে বলেন, ফোর্সেস গোল-২০৩০ অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন বর্তমান সরকারের এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ, যা জাতির পিতার প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকেই প্রণীত হয়েছে। ডিফেন্স এটাচে ফ্রান্স সশস্ত্র বাহিনীর সাথে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সম্পর্ক উন্নয়নে ফ্রান্স প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এ সম্পর্ক আরো সুগভীর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর দুটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড ষ্টাফ কলেজ এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে ফ্রান্স’সহ অন্যান্য দেশের অফিসারদের প্রেরণের আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় যৌথ অনুশীলন, দুর্যোগ ব্যবস্থা ও সন্ত্রাস দমন অভিযান ও অনুশীলনে ফ্রান্স সশস্ত্র বাহিনীর সাথে কাজ করতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আগ্রহের কথা পূনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন। তিনি বক্তব্যের শুরুতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করেন তিরিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগকে এবং স্মরণ করেন সাত জন বীরশ্রেষ্ঠসহ সশস্ত্র বাহিনীর সকল শহীদদের। যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি মহান স্বাধীনতা, একটি পতাকা এবং পৃথিবীর মানচিত্রে নিজস্ব পরিচিতি। ফ্রান্সের বাংলাদেশ দূতাবাসে নতুন ডিফেন্স উইং প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিষ্ঠার বছরেই প্রথম সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন করতে পেরে তিনি নিজেও গর্ববোধ করছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ফ্রান্সে প্রতিরক্ষা উইং প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ সরকারের ফ্রান্সের সাথে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সুদৃঢ় করার আন্তরিক আগ্রহেরই প্রতিচ্ছবি। তাই তিনি প্রশিক্ষণসহ যে কোন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ফ্রান্স প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অব্যাহত আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। ক্রমাগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি ৮.১৩ এ উন্নীত হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধ পরিকর। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মান্যবর রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের পর সকলে নৈশ ভোজে অংশগ্রহণ করেন। নৈশভোজ চলাকালীন “উদীয়মান বাংলাদেশ এবং সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন”, “সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ এম্ফিবিয়াস অনুশীলন” এবং সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০১৯ উপলক্ষে নির্মিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।