আত্মহত্যার ব্রিজেই সেই ‘বাকের ভাই
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:২৬:২৭,অপরাহ্ন ১৫ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ৮৬৭ বার পঠিত
ইশতিয়াক পারভেজ :
সন্ধ্যা প্রায় হয় হয়, আকাশ কালো করে জমে আছে মেঘ। একটু পর পর বৃষ্টি হয়েও ঝরছে, আবার থামছে। যেন মাটির সঙ্গে খেলায় মেতেছে তারা। তখন ব্রিস্টলের বিখ্যাত ক্লিফটন সাসপেনশন ব্রিজের দুই পাড় ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে আঁধার। পাকিস্তানি ট্যাক্সি চালক আজম ভাই বললেন, ‘দ্রুত চলে যেতে হবে, এখানে যে কোন কিছুই হতে পারে!’ ইংল্যান্ডে এত নিরাপত্তায় তার আবার কিসের ভয়? ওহ! বলে রাখা ভালো এই ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়ে এখন পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছে ১২৭ জন মানুষ! ভয়ের কারণটা সেখানেই, তার ধারণা এখানে ঘুরে বেড়ায় সেই সব অতৃপ্ত অশরীরী আত্মারা। কিন্তু সেই প্রকৃতির মুগ্ধতা ততক্ষণে আমাদের পেয়ে বসেছে, তাই কিসের ভয়। সেই সঙ্গে সুযোগ এসেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ ভেসে যাওয়ার দুঃখ ভোলারও। চলে আসার যখন ভীষণ তাড়া, মনও চাইছে না ঠিক তখন সেই দুঃখে ভাগ বসাতে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সেখানে হাজির ‘বাকের ভাই’। নামটি ভুলে গেলে মনে করিয়ে দিচ্ছি, তিনি প্রখ্যাত লেখক, নাট্যকার হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্ট সেই ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে বাস্তব হয়ে উঠেছিলেন- আসাদুজ্জামান নূর।
তাকে পাওয়ার পর উড়ে গেলো সাসপেশন ব্রিজের সব গল্পের কথা। সেই গল্প পরে বলা যাবে। আপতত শুনুন জনপ্রিয় সেই অভিনেতার ক্রিকেট নিয়ে দীর্ঘশ্বাসের কথা।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ক্রিকেট দেখতে এসেছেন সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি আসাদুজ্জমান নূর। কিন্তু দেখা হলো না। বৃষ্টির কারণে ম্যাচও পরিত্যক্ত। তার উপর একটি পয়েন্টও হয়েছে হাতছাড়া। তাই মনটা তারও ভীষণ বিষণ্ন। তাইতো তিনি বলেন, ‘আজ ক্রিকেটের ভীষণ বিষণ্ন একটা দিন। প্রকৃতি যেমন বিষণ্ন তেমনি আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে খেলা দেখতে এসেছি বা যারা প্রবাসী বাঙালি যারা আছেন সকলেই বিষন্ন হয়ে আছেন। কারণ খেলাটা হয়নি। খেলাটা আমাদের জন্য খুব জরুরি ছিল। এই খেলাটা সকলেই আশা করেছিলাম। শ্রীলঙ্কাকে আমরা হারানোর মতো শক্তি রাখি এবং তাতে করে আমরা জয়লাভ করলে অনেকদূর এগিয়ে যেতাম। এখন সেই জায়গাটিতে আমাদের একটা সমস্যা তৈরি হল। ঝুঁকি তৈরি হলো। তবে আমি আশা করি, সবাই আশা করে আমাদের দল আগামীতে আরও ভালো খেলবে আর বাংলাদেশকে একটা শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে যাবে। এবং আমরা বাংলাদেশ টিম নিয়ে যেন আরো গৌরব বোধ করতে পারি। সে সুযোগ তারা করে দেবে। সকলের প্রতি শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা জানাচ্ছি।’
আসাদুজ্জামান নূর ইংল্যান্ডে এসেছেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তিনটি ম্যাচ দেখার জন্য। এরই মধ্যে দুটি ম্যাচ দেখেছেন। গতকাল তার ম্যাচ দেখা হয়নি ব্রিস্টলের বেরসকি বৃষ্টির কারণে। তাই চলে এসেছেন সাসপেনশন ব্রিজ দেখতে। আসবেন না কেন? ১৮৮৬ সালে নির্মিত এই ব্রিজ এখনো সদর্পে দাঁড়িয়ে আছে অ্যাভন নদীর উপরে। একপাশে পাহাড় আরেক পাশে জঙ্গল, নিচে কুল কুল করে বয়ে চলছে নদী। সব মিলিয়ে যেন এক অভূতপূর্ব প্রকৃতি রানীর রাজকন্যাদের মিলন মেলা। ব্রিস্টলের মাঠে বিশ্বকাপ কভার করতে আসা বাংলাদেশসহ নানা দেশের সংবাদকর্মীরাও হাজির হয়েছেন এই ঐতিহাসিক ব্রিজের রূপে মুগ্ধ হতে। সঙ্গে আছেন মাঠে খেলা দেখতে না পেরে হতাশ অনেক দর্শকও। সেখানে বাংলাদেশের অভিনয় জগতের সেরা এই ব্যাক্তিত্বকে পেয়ে সবাই ভীষণ আপ্লুত। চলে এ অভিনয় শিল্পীর সঙ্গে ছবি তোলার প্রতিযোগিতাও। তার আগমনে যেন মিলিয়ে যায় সাসপেনশন ব্রিজের সব সাসপেন্সও।
তবে পাঠক আপনাদের হতাশ করি কিভাবে! এই ব্রিজের গল্পটা শোনাতেই হবে আপনাদের। যদিও অনেকেই জানেন তারপরও বলছি। কিছুটা চোখে দেখা কিছুটা শুনে নেয়া। এই ব্রিজের শুরুতেই দেয়ালে একটি নোটিশ পাবেন। সেখানে লেখা ‘টক টু আস। কল সামারিয়া ফ্রি।’ এই লেখার নিচে একটি ফোন নাম্বারও দেয়া। আসলে সামারিয়া একটি এনজিও সংস্থার মতো কাজ করে। তারা এখানে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে আসা মানুষদের কাছে আবেদন জানিয়েছে তাদের কাছে ফোন করার জন্য। বা কেউ যদি দেখেন কাউকে আত্মহ্যতার উদ্দেশ্যে যেতে তাকে আটকে রেখে খবর দেয়ার জন্য। তাদের কাজ হবে সেই ব্যাক্তিকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়া। আসলে এই ব্রিজ থেকে ঝাপিয়ে অ্যাভন নদীদে পড়ে আত্মহত্যার প্রবণতা এতটাই বেশি যে এমন উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছে সামারিয়া নামের সংস্থাটি।
এই ব্রিজটি থেকে লাফিয়ে পড়ে যেমন প্রাণহানীর অনেক অনেক করুণ গল্পও আছে। তেমনি বেঁচে যাওয়ারও এক বিরল ঘটনাও রয়েছে। ১৮৮৫ সালে সারাহ এন হেনলি নামের ২২ বছরের এক তরুণী আত্মহত্য করতে গিয়েছিলেন। মেয়েটির লাফ দেয়ার পর তার পরনের স্কার্ট প্যারাস্যুট হিসেবে কাজ করেছিল। নদীর তীরে কাদার মধ্যে পড়ে যায় মেয়েটি। শোনা যায়, সেই মেয়ে পরবর্তীতে ৮০ বছর বেঁচেছিল। যাই হোক আমাদেরও প্রার্থনা এটাই এখানে যেন মানুষ শুধু প্রকৃতির রূপেই মুগ্ধ হতে আসে জীবন দিতে নয়।