এক রিকশাচালকের ক্রিকেটপ্রেম
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৩৮:১০,অপরাহ্ন ০৮ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ৪৪৮ বার পঠিত
শাহরিয়ার নাসের
রফিকুল ইসলাম রনি পেশায় একজন রিকশাচালক। ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বিসকা গ্রামে তার বাড়ি। দারিদ্রতার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণীর বেশি পড়তে পারেননি তিনি। পেশায় রিকশাচালক হলেও ক্রিকেটের প্রতি রয়েছে তার অসীম ভালোবাসা। বলা যায়, ক্রিকেটের একজন অন্ধ ভক্ত। ক্রিকেটকে যারা মনেপ্রাণে ভালোবাসেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। ক্রিকেটের প্রতি তার যে ভালোবাসা তা আর্থিক অস্বচ্ছলতাও বিন্দুমাত্র কমাতে পারেনি।
দুই ছেলে নিয়ে সংগ্রামমুখর জীবনযাপন করেন তিনি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জীবিকার সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই চলে তার অভাবের সংসার। তবে বাংলাদেশের খেলা চলাকালীন রিকশা চালানো বন্ধ করে দেন। ত্রিদেশীয় সিরিজ, বিপিএল, আইপিএল, সিপিএল খেলাগুলোও তিনি নিয়মিত দেখেন। আগে খেলা পরে ইনকাম- এই নীতিতে তিনি বিশ্বাসী। খেলাধুলার যত আপডেট খরব সব তার কাছে পাওয়া যায়। বিশ্বের ক্রিকেট খেলুড়ে সকল দেশের প্রায় সব খেলোয়াড়দের নাম তিনি জানেন। বাংলাদেশের সাথে কোন দেশের খেলা হবে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কার পারফরমেন্স কেমন, অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের পারফরমেন্স কেমন এসবও তিনি ব্যাখ্যা করেন।
রনির সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই তিনি ক্রিকেটকে মনেপ্রাণে ভালোবাসেন। এলাকায় অনেক ক্রিকেট খেলেছেন। স্বপ্ন ছিলো একজন ক্রিকেটার হওয়ার। অর্থের অভাবে সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি তার। এই খেলার জন্য নিজের মা এবং স্ত্রীর অনেক বকা শুনতে হয়েছে তাকে। এখনও শুনতে হয়। ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার তার আইডল। বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং সাকিব আল হাসান তার প্রিয় ক্রিকেটার। গত এশিয়া কাপে বাংলাদেশের খেলার জন্য তিনশো টাকার ভাড়াও তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। তার ইচ্ছা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার। যতদিন বেঁচে থাকেন ততদিনই ক্রিকেটের সাথে থাকতে চান তিনি।
রনির মা মেহেরা খাতুনের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই রনি খেলা পাগল। খেলা দেখার জন্য অনেক দূরে চলে যেতো। এখনও সে অভ্যাস ছাড়েনি। টিভিতে খেলা হলে আর রিকশা চালায় না। খেলা নিয়েই পড়ে থাকে। বাড়িতে যে বউ বাচ্চা আছে তা নিয়ে তার কোনো চিন্তা নাই। আমার ইচ্ছা ছিলো রনিকে পড়াশোনা করানোর। কিন্তু, পরিবারের অভাবের কারণে আর সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
রনির স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, টিভিতে খেলা হলে সে আর ইনকাম করে না। বাড়িতে আমরা কেমনে চলমু এই চিন্তা তার মাথায় থাকে না। অনেক সময় এই খেলা দেখার কারণে বাড়িতে ঠিকমতো বাজার আনে না। গরিবের আবার খেলা! এই যে না করি তবুও খেলা দেহে। আমরা গরিব মানুষ। আমরার কষ্ট করে চলতে হয়। সে যদি এভাবে খেলা দেহে তাইলে আমরা চলমু কেমনে!
রনির পাশের বাড়ির জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গরিব হলেও রনি ভাই একজন হাসিখুশি মানুষ। আমাদের সাথে আড্ডায় সে ক্রিকেট নিয়ে নানা গল্প করে। আমরাও দেখা হলেই তার সাথে ক্রিকেট নিয়ে নানা গল্প করি। খেলাধুলার সব খবর তার কাছে জানা যায়। তার সাথে দেখা হলেই খেলাধুলা নিয়ে গল্প শুরু করে দেয়। খেলা দেখার জন্য যাত্রী পেয়েও না যাওয়ার বহু রেকর্ড আছে তার।
মাঠে দুই দলের খেলোয়াড়দের জয়ের জন্য তীব্র লড়াই প্রচণ্ড চেষ্টা আর কঠিন আকুতি, ক্রিকেটের উন্মাদনা কী কেবল এটুকুতেই সীমাবদ্ধ? একদমই না! মাঠ পেরিয়ে মাঠের ভেতরের গুটিকয়েক মানুষের টানটান উত্তেজনা যেন ছুঁয়ে দেয় সমগ্র বিশ্বের মানুষকে। ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে এমন কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ আছেন যারা ঠিক অন্যদের মতো নন। তাঁরা ক্রিকেটকে ভালোবাসেন মনেপ্রাণে। সংসার কীভাবে চলবে, বাজারের টাকা কোথা থেকে আসবে সেসব খেয়াল তাদের ভেতর থাকে না। রনির মতো ক্রিকেটপ্রেমীরা বেঁচে থাকুক যুগ যুগ ধরে।