ফ্রান্সে ধর্মঘটে বিপর্যস্ত জীবনযাপন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৮:২৭,অপরাহ্ন ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৭৫৬ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্কঃ
ফ্রান্স সরকারের বিতর্কিত পেনশন আইন সংস্কারের দাবিতে নিজ নিজ কাজ বন্ধ করে লাখো কর্মজীবী মানুষের ধর্মঘটের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জীবনযাপন।বৃহষ্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ ঘর্মঘট চলবে আজ সোমবার পর্যন্ত।ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ধর্মঘট। ফলে ধর্মঘটের কারণে পুরো দেশে মারাত্বক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ধর্মঘটে সংশ্লিষ্ট ট্রেড ইউনিয়নগুলোর দাবি গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে সমগ্র ফ্রান্সে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে বিক্ষোভে মানুষের উপস্থিতির সংখ্যা ৮ লাখ ৬ হাজারের মত হবে। ধর্মঘটের সমর্থনে ৯০% পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ও ৭০% স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাতিল করা হয়েছে প্রায় ২০% বিমান ফ্লাইট।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গণপরিবহন অপারেটর আরএটিপি, এসএনসিএফ, সরকার পরিচালিত বিদ্যুৎ কোম্পানি ইডিএফ, জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ফ্রান্স, পুলিশ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, শিক্ষক, আইনজীবী, ট্যাক্সি ও মালবাহী যানবাহন চালক, ডাক বিভাগের কর্মকর্তা, কৃষক, সরকারি কর্মচারী, শোধনাগার কর্মী ও শিক্ষার্থীসহ অটোমোবাইল নির্মাণকারী কোম্পানি রেনল্টের কর্মীরাও এ ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেছে।
রাজধানী প্যারিসের বাস ও মেট্রো অপারেটরা জানান, ধর্মঘট চলতে পারে অন্তত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার রাজধানী প্যারিসে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের হাজার হাজার সদস্য রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। ইউনিয়ন নেতাদের দাবি এদিন দেশব্যাপী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।
এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। প্যারিস ও নঁত শহরে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে দাঙ্গা পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পুলিশ জানায়, প্যারিসে ৭১ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকায় ঐতিহ্যবাহী আইফেল টাওয়ারসহ ফ্রান্সের জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলো দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া, শুধু রাজধানী প্যারিসেই ছয় হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রেল অপারেটর এসএনসিএফ জানায়, বৃহস্পতিবার ৯০ শতাংশ আঞ্চলিক ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। প্যারিস মেট্রোতে রোজ ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু এদিন ১৬টি লাইনের ১১টিই বন্ধ ছিল।
এছাড়া, বৃহস্পতিবার দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কয়েকশ’ ফ্লাইট বাতিল করা হয়। পরবর্তী দিনগুলোতেও আরও ফ্লাইট বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফ্রান্সের সরকারি প্লেন ব্যবস্থা এয়ার ফ্রান্স জানায়, ধর্মঘটের কারণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের ৩০ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। প্লেন ব্যবস্থা ইজিজেট জানায়, ধর্মঘটের কারণে তাদের ২২৩টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
যানবাহন শ্রমিক থেকে শুরু করে শিক্ষক, আইনজীবী, হাসপাতাল ও বিমানবন্দর কর্মীসহ সব ধরনের পেশাজীবী মানুষ বৃহস্পতিবারের ধর্মঘটে অংশ নেন। অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট কতোদিন অব্যাহত থাকবে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। ম্যাক্রোঁ পেনশন ব্যবস্থা ও অবসরের সময়সীমা সংস্কার পরিকল্পনা বাতিল না করা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে বলে জানান ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা।
প্যারিসের এক পরিবহনকর্মী প্যাত্রিক দোস সান্তোস বলেন, আমরা অন্তত এক সপ্তাহ বিক্ষোভ করতে যাচ্ছি। এক সপ্তাহ পর সরকার পিছু হটতে বাধ্য হবে।
১৯৯৫ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন সরকার পেনশন ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় দেশজুড়ে তিন সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভ-ধর্মঘট হয়েছিল।
বর্তমানে, ৪০টি ভিন্ন ধরনের অবসরের বয়সসীমা ও পেনশন ব্যবস্থা রয়েছে। ম্যাক্রোঁর মতে, এটি অন্যায্য ও ব্যয়বহুল। তিনি একটিই ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন যেখানে পেনশন প্রাপ্ত সবাই সমান সুবিধা পাবেন।
যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দেশজুড়ে কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সরকার পেনশন আইন পরিবর্তন না করলে এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতারা।