প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন আজ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪০:১৭,অপরাহ্ন ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৫৪ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজকের জন্মদিনটি এমন সময়ে পালিত হচ্ছে যখন তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে।
এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতে হয়েছে। শেখ হাসিনার কল্যাণমুখী নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ায় গত এগারো বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের বাইরেই জন্মদিন পালন করছেন তিনি।
এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি অর্জন তার আজকের জন্মদিনকে আরও সাফল্যমণ্ডিত করেছে। এর মধ্যে অন্যতম ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সোমবার সমন্বিত টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের ব্যাপক সফলতার জন্য তাকে এ সম্মাননায় ভূষিত করেছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই-গ্যাভি)।
এবারের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ইউনিসেফের ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর এই অর্জনে পুরো জাতি গৌরবান্বিত।
এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনাকে ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এ নিয়ে তার আন্তর্জাতিক সাফল্যের ঝুড়িতে স্থান পেল ৩৯টি পদক।
প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো অন্যান্য বছরের মতো এবারও কেক কাটা, দোয়া ও মিলাদ-মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তার জন্মদিন উদযাপন করবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান আজকের ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ শেখ হাসিনা। তার ডাকনাম হাসু। বঙ্গবন্ধু আদর করে এই নামেই ডাকতেন।
শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায় দাদা-দাদির কোলে-পিঠে মধুমতি নদীর তীরে। পাঁচ ভাইবোনের অপর চারজন হলেন- শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল।
এর মধ্যে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বাবা-মাসহ সবাই ঘাতকের হাতে নিহত হন।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবার নিয়ে পুরান ঢাকার রজনী বোস লেনের ভাড়া বাসায় ওঠেন।
বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়।
তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
ওই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে øাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে থাকাকালে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর পুরো পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দি রাখা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দি অবস্থায় তার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম দেন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা পুতুলের জন্ম হয়।
১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার খবর পান।
তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।
১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি।
১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পর তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন।
২০০৭ সালের ১/১১-এর পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে আসার সময় বেআইনিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
কিন্তু সাহসী শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা, ষড়যন্ত্র ও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ওই বছরের ৭ মে দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু এর মাত্র দু’মাস পর ১৬ জুলাই নিজ বাসভবন সুধা সদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়।
জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাকে বন্দি করে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। কারাগারে তার জীবননাশের ষড়যন্ত্র চলে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আওয়াজ ওঠে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন নয়। বদলে যায় দৃশ্যপট। শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় পায়। এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সরকারে ও দলে আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন। আর এতে সফলতাও আসে আকাশচুম্বী। সর্বশেষ চলমান চাঁদা-টেন্ডারবাজ ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান সারা দেশে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতিকে নতুন এক আশা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার এই আশার নাম- রূপকল্প-২০২১। তিনি সব বাংলাদেশিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যেখানে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি থাকবে।
স্বাধীনতার চার দশক পরে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহু ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই।
এছাড়া মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব মহলের মনোযোগ কেড়েছেন শেখ হাসিনা। মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন সারা বিশ্বে। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে বিশ্ব নেতারা তার এই মানবিক দৃষ্টান্তের প্রশংসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য এনে দিয়েছেন।
এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
সৌজন্য – যুগান্তর