এখন বিশ্ববাসীর উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই: শেখ হাসিনা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:১০:২২,অপরাহ্ন ১২ নভেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ৩৫৩ বার পঠিত
গোলাম মুজতবা ধ্রুব
সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিতরণের ক্ষণে বিশ্ব দরবারে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন বিশ্বের মানুষের উন্নয়নে অবদান রাখতে চায় বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর ক্রিয়েটিভ ইকনমি’র প্রথম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
উগান্ডার ‘মোটিভ ক্রিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার পেয়েছে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা জাবেথ কাওয়ানগুজু এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।
ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে এ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুরস্কার প্রবর্তনের জন্য জাতিসংঘ সংস্থাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ইউনেস্কো-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত বিশ্ব মানবতা ও শান্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের প্রতি সবচেয়ে উপযুক্ত সম্মান।”
বাংলাদেশের জাতির পিতার বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কোর আদর্শের সঙ্গে তার মিল দেখান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
শেখ হাসিনা বলেন, “তার জ্যেষ্ঠ কন্যা হিসেবে খুব কাছ থেকে তাকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সেজন্যই আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে, তিনি ইউনেস্কোর একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন।
“ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রসার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তার কর্মোদ্যোগসমূহ ইউনেস্কোর বিভিন্ন আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”
বিশ্ব মঞ্চে শিক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতিগত সিদ্ধান্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেন।
“তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় সর্বোত্তম বিনিয়োগ এবং তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক ঘোষণা করেন।
“যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সদ্য-স্বাধীন দেশে নানা ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা থাকা সত্তে¡ও তিনি প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক ও কর্মচারীর চাকুরি জাতীয়করণ করেন।”
বর্তমান সরকার তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষায় বিনিয়োগ সুফল দিতে শুরু করেছে। গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে।”
তিনি জানান, মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে। মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ১৭৩ এবং মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর। বাংলাদেশ এ বছর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সকল শর্ত পূরণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমার সরকারও শিক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। আমরা দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছি।”
তিনি জানান, দেশে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকার পরিচালিত। ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে।
এখন প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি বই বিতরণ করা হয়। পিছিয়ে-পড়া এলাকাগুলোতে প্রায় ২৯ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও বিশ্ববাসীকে জানান শেখ হাসিনা।
এসব উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ঠেকাতে ‘ব্যাপক সহায়তা’ করেছে এবং প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক স্তরে ছাত্রভর্তির হার ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
২০১৭ সালে স্কুলে ছেলে-মেয়ের অনুপাত বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩:৪৭-এ দাঁড়িয়েছে, যা ২০০৯ সালে ছিল ৩৫:৬৫। ক্রমবর্ধমান হারে নারী শিক্ষা প্রসারের ফলে বাল্য বিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কয়েক দশক ধরে আমাদের দেশের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদয় সমর্থনকে আমরা বিনীতভাবে স্বীকার করি।
“আমরা এখন আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে অবদান রাখতে চাই।”
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের জন্য সৃজনশীল অর্থনীতির আন্তর্জাতিক বছরের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকারের এই ক্ষেত্রগুলোতে ইউনেস্কোর প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে বাংলাদেশ বিশেষভাবে ধন্য এবং সম্মানিত।”
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি দেওয়ায় কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’ -এ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও একইসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপানের সঙ্গে ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত বলেও জানান শেখ হাসিনা।
মুজিববর্ষের এই মাহেন্দ্রক্ষণে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রবর্তন এবং বিতরণের জন্য ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে-কে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৩ সালের ২৩ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্ব শান্তি পরিষদের দেওয়া ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার নামে পুরস্কার প্রবর্তনে সহায়তা করায় এসময় তিনি ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের প্রতিটি সদস্য এবং সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বক্তব্য শেষ করার আগে ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে ইউনেস্কোর সব সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউনেস্কোর কর্মকর্তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান।