আজ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর হচ্ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৮:১৩,অপরাহ্ন ৩১ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৭৬৭ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্ক :
দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া শেষে আজই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে চূড়ান্তভাবে বেরিয়ে আসছে ব্রিটেন। ঘোষণা অনুযায়ী আজ ৩১শে জানুয়ারি শুক্রবার রাত এগারটায় এ বিচ্ছেদ কার্যকর হচ্ছে। এতে যুক্তরাজ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে।
অবশ্য আগামী ১১মাস পরিবর্তনকালীণ সময় বা ট্রানজিশনাল পিরিয়ড হিসেবে বিবেচিত হবে। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য ইইউ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং ইইউকে অর্থ প্রদান করবে।
বিচ্ছেদের কারণে যেসব পরিবর্তন আসবে-
১. যুক্তরাজ্যের এমপিরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যপদ হারাবেন
নাইজেল ফারাজ এবং অ্যান উইড্ডেকমবের মতো পরিচিত মুখগুলোসহ যুক্তরাজ্য থেকে ৭৩ জন সদস্য ছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে। ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার ফলে তারা তাদের সদস্যপদ হারাবেন। কারণ যুক্তরাজ্য একই সাথে ইইউ’র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোও ছেড়ে যাচ্ছে।
তবে অন্তর্বর্তী সময়ে ইইউ’র আইন কানুনের প্রতি যুক্তরাজ্য শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস আইনি সমস্যাগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দেয়া অব্যাহত রাখবে।
২. ইইউ বৈঠকে আর নয়
ব্রিটিশ মন্ত্রীরা এখন থেকে আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়মিত বৈঠকগুলোতে অংশ নিতে পারবেন না। ভবিষ্যতে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিল সামিটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অংশ নিতে চান তাহলে তার জন্য দরকার হবে বিশেষ আমন্ত্রণ।
৩. যুক্তরাজ্য বাণিজ্যক্ষেত্রে নতুন নিয়ম ঠিক করতে পারবে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য থাকায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য আলোচনা করতে পারত না। তবে এবার যুক্তরাজ্য তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রি বা এসব কেনার জন্য নতুন নিয়ম ঠিক করতে বিশ্বের যে কোনো দেশের সাথে আলোচনা শুরু করতে পারবে।
ব্রেক্সিট সমর্থকরা বলছেন নিজের বাণিজ্য নীতি ঠিক করার স্বাধীনতা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।
৪. পাসপোর্টের রং পরিবর্তন
প্রায় ত্রিশ বছর পর নীল রংয়ের পাসপোর্ট আবার ফিরে আসবে যুক্তরাজ্য। ২০১৭ সালে এ পরিবর্তনের কথা ঘোষণা দিয়ে তখন অভিবাসনমন্ত্রী ব্রান্ডন লুইস দেশটির ঐতিহ্যবাহী নীল ও সোনালী ডিজাইনের পাসপোর্ট আবার ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিলেন।
এ পাসপোর্ট প্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছিলো ১৯২১ সালে। তবে বর্তমান যে পাসপোর্ট আছে সেটিও বৈধ থাকবে।
৫. ব্রেক্সিট কয়েন আসছে
ব্রেক্সিটকে স্মরণীয় করতে যুক্তরাজ্য নতুন কয়েন বাজারে ছাড়বে। প্রায় ৩০ লাখ বিশেষ কয়েন আসবে যেখানে ৩১শে জানুয়ারি এবং লেখা থাকবে ‘পিস, প্রসপারিটি অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ উইথ অল নেশনস’।
তবে এ কয়েনকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এক পক্ষ ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে তারা এ কয়েন বর্জন করবে। সরকার একই ধরণের আরেকটি কয়েন আনার পরিকল্পনা করছে যেখানে উল্লেখ থাকবে ৩১শে অক্টোবর, যে তারিখে প্রকৃতপক্ষে ব্রেক্সিট কার্যকরের কথা ছিল।
৬. ব্রেক্সিট ডিপার্টমেন্ট বন্ধ হবে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ব্রেক্সিটের জন্য যুক্তরাজ্যের যে বিভাগ আলোচনা চালিয়েছিলো সেই বিভাগটি বন্ধ হয়ে যাবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে’র সময়ে ওই বিভাগটি চালু করা হয়েছিলো ২০১৬ সালে। সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাজ্যের নেগোসিয়েশন টিম হবে ডাউনিং স্ট্রীট অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর অফিস ভিত্তিক।
৭. জার্মানি থেকে অপরাধী ফেরাতে বাধা
কোনো সন্দেহভাজন অপরাধী যদি যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে গিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেয় তাহলে তাকে ফেরত পাবে না যুক্তরাজ্য। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের নাগরিককে প্রত্যর্পণের সুযোগ নেই, জার্মান সংবিধান অনুযায়ী। তবে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস বলছে ইউরোপিয়ান অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে অন্তর্বর্তী সময় পর্যন্ত।
পরিবর্তন হবে না যেসব বিষয়ে-
ক. ভ্রমণ
অন্তর্বর্তী সময়ে (১১ মাস) যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ভ্রমণের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের লাইনেই দাঁড়াতে পারবেন।
খ. ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পেট পাসপোর্ট
যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পেট পাসপোর্টের বৈধতা ইইউতে অব্যাহত থাকবে।
গ. ইউরোপিয়ান স্বাস্থ্য বীমা কার্ড
এ কার্ড দিয়েই যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে। এর সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
ঘ. ইউরোপীয় ইউনিয়নে বসবাস ও কাজ
অন্তর্বর্তী সময়ে (১১ মাস) চলাচলের স্বাধীনতা অব্যাহত থাকবে। তাই যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ইইউভুক্ত দেশে বসবাস ও কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। ইইউভুক্ত অন্য দেশের নাগরিকরাও একই সুবিধা পাবে যুক্তরাজ্যে।
ঙ. পেনশন
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য দেশে বসবাসরত যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা রাষ্ট্রের পেনশন সুবিধা পাবেন।
চ. বাজেটে অবদান
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেটে অন্তর্বর্তী সময়েও (১১ মাস) অবদান রেখে যাবে যুক্তরাজ্য। তবে এর পর আর এই বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
ছ. বাণিজ্য
যুক্তরাজ্যের সাথে ইইউ’র বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে। আপাতত নতুন কোনো চার্জ আরোপ করা হবে না।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।