ধরিত্রী বাঁচানোর শেষ সুযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১৭:৪৪,অপরাহ্ন ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৬৪৯ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্কঃ
জলবায়ু নিয়ে নানা উদ্বেগের মধ্যে সোমবার স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন ‘কপ-২৫’।
এ সম্মেলনকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি এড়িয়ে ধরিত্রী বাঁচানোর শেষ সুযোগ হিসেবে দেখছেন ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র জোটের (অ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেটস-এওএসআইএস) নেতারা।
জোটের ৪৪ দেশের নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনকে এখন ‘জরুরি অবস্থা’ অ্যাখ্যা দিচ্ছে। দু’সপ্তাহব্যাপী এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এতে যোগ দিয়েছেন। সম্মেলন শেষ হবে ১৩ ডিসেম্বর। বিভিন্ন কারণে এবারের সম্মেলনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানায়, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশকে ‘ন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। অর্থাৎ হাতে আছে আর মাত্র এক বছর।
ফলে যেসব দেশ এখনও এ কাজ শেষ করতে পারেনি, তাদের ওপর চাপ তৈরির শেষ সুযোগ এবারের সম্মেলন। প্যারিস চুক্তিতে দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পযুগের (১৮৫০-১৯০০) চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনেক নিচে রাখতে সম্মত হয়েছে।
এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবারের সম্মেলনে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
কপ-২৫ সম্মেলন জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের ২৫তম বার্ষিক সম্মেলন (ইউএনএফসিসিসি), কিয়োটো প্রটোকলের (সিএমপি১৫) ১৫তম সভা এবং প্যারিস চুক্তির পক্ষগুলোর দ্বিতীয় সভাকে (সিএমএ২) অন্তর্ভুক্ত করবে।
এবারের সম্মেলনের সভাপতি চিলির পরিবেশমন্ত্রী মিজ ক্যারোলিনা স্মিদভ জালদিভার। এ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কর্মসূচির পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এসব নির্দেশনার অন্যতম হচ্ছে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে কয়েকটি বিষয় নিষ্পত্তি করা। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একদিন পরে এবং কপ-২৬ সম্মেলনের মাত্র ৫ দিন আগে প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের। তবে জাতিসংঘের জলবায়ু কনভেনশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বের জলবায়ু দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে নজিরবিহীন দাবানল, বন্যা, সাইক্লোন, খরা এসবের মধ্যে তারই চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, বিশ্ব এমন এক অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে যেখান থেকে ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এতদিন ধরে যেসব পদক্ষেপ বিশ্ব নেতারা নিয়েছেন সেগুলো একেবারেই পর্যাপ্ত নয়।এওএসআইএস জোটের ডেপুটি প্রধান জ্যানাইন ফেলসন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে আমরা এ আলোচনাকে শেষ সুযোগ হিসেবে দেখছি।’
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ২ কোটি মানুষ ভিটেমাটিছাড়া হন বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম।
নতুন এক রিপোর্টে সংস্থাটি জানায়, কিউবা, ডমিনিকা, টুভ্যালুর মতো ক্ষুদ্র দেশগুলোতে গত ১০ বছরে (২০০৮-১৮) জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়েছে। ইউরোপের দেশগুলোতে এ সময়ের চেয়ে ১৫০ গুণ বেশি হারে মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
সম্মেলনটি এ বছর নভেম্বরে ব্রাজিলে হওয়ার কথা ছিল। তবে পরিকল্পনা শুরুর এক বছর আগেই নবনির্বাচিত সভাপতি জেইর বোলসোনারো অর্থনৈতিক মন্দার কারণ দেখিয়ে স্বাগতিক হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। পরে চিলি এগিয়ে আসে। কিন্তু বৈঠকের আগে সামাজিক অস্থিরতার ফলে অক্টোবরের শেষদিকে চিলিও সরে যায়। পরে জাতিসংঘ, চিলি এবং স্পেনের পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে স্পেনে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
সৌজন্য – যুগান্তর