ফ্রান্সে ফাহিমের বিশেষ প্রদর্শনী
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:১৩:১৬,অপরাহ্ন ২৬ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৯৩৮ বার পঠিত
লোকমান আহম্মদ আপন
প্যারিসের একটি অভিজাত সিনেমা হলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচিত ফরাসী মুভি ‘ফাহিম’র একটি বিশেষ প্রদর্শনী।ফরাসী সংস্থা Secours Catholique ও CEDRE তাদের ফরাসী ভাষা শিক্ষা কোর্সে অংশগ্রহনকারীদের জন্যে আয়োজন করেছিলো এ বিশেষ প্রদর্শনীর। এতে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির বিপুল সংখ্যক ফরাসী ভাষা শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।উপস্থিত ছিলেন ফাহিমের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করা আলোচিত অভিনেতা মিজানুর রহমান।উপস্থিত ছিলেন Secours Catholique ও CEDRE এর কর্মীরা, ভাষা শিক্ষাকোর্ষের শিক্ষকরা এবং আমন্ত্রিত বেশ কিছু দর্শক। প্রদর্শনীতে ফরাসী ভাষা শিক্ষার্থী বেশ কিছু বাংলাদেশী উপস্থিতি ছিলেন।ফাহিম সিনেমাটি তৈরী করা হয়েছে বিশ্ববিখ্যাত বাংলাদেশী ক্ষুদে দাবাড়ু ফাহিম এবং তার বাবার ফ্রান্সে আগমন, আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখান পরবর্তী কঠিন সংগ্রাম এবং ফাহিমের দাবা খেলার উপর ভিত্তি করে।
একাধিক ভাষায় প্রকাশিত ক্ষুদে দাবাড়ু ফাহিম এবং তার বাবার বাস্তব ঘটনার উপর লেখা বই অবলম্বনে পরিচালক Pierre François Martin-Laval নির্মাণ করেছেন ছবিটি।পরিচালক নিপুন দক্ষতায় ফাহিম এবং তার বাবার ফ্রান্সে আসা এবং আশ্রয় প্রার্থনা এবং আশ্রয় প্রত্যাখান পরবর্তী বাস্তব সংগ্রামের সত্য ঘটনা তুলে ধরেছেন ১ ঘন্টা ৪৭ মিনিটের এই সিনেমাটিতে।ক্ষুদে দাবাড়ু ফাহিমের বাস্তব জীবন কেন্দ্রিক এই সিনেমায় একটি বড় মেসেজ আছে ফরাসী ভাষা শেখার গুরুত্বের বিষয়টি।
নিজের জন্মস্থান বাংলাদেশ ছেড়ে জীবন বাঁচাতে পালাতে বাধ্য হয়ে আট বছরের দাবাড়ু ফাহিম তার বাবার সাথে ফ্রান্সে আসে, এখানে আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং আশ্রয় প্রত্যাখ্যাত হয়ে অবৈধ অভিবাসী হয়ে পড়ে।ধুলিস্যাৎ হয়ে যাওয়া স্বপ্ন তাদেরকে নিঃস্ব ও অসহায় বানিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়।
ভাগ্যের চাকা ঘুরে একসময় ফাহিমের সাথে পরিচয় ঘটে ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় দাবা কোচ সিলভেইনের (প্রকৃত নাম: জ্যাভিয়ার পারমেনিয়ার) ।এই কোচ ফাহিমের দুর্দান্ত মেধাকে চিনতে পেরেছিলেন, বুঝতে পেরেছিলেন ফাহিম এক বিরল মেধাবী ছেলে। চরম অসহায়ত্বের পরেও ফাহিম দাবার বোর্ডে এক জলন্ত বারুদ।দাবার বোর্ডে খুব সহজে সে কুপোকাত করতে পারে প্রতিপক্ষকে। কোচ সিলভেইন সেই মেধাকে আরো ধারালো করে তুলেন এবং এক সময় ফাহিম ফ্রান্স অনুর্ধ্ব ১২ দাবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়। এদিকে তার বাবা নুরার জীবন কাটতে থাকে পথে পথে অসহায়ের মতো জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।বিশেষ করে ফরাসী ভাষা না জানার কারণে তার জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিসহ।আশ্রয় আবেদন পরবর্তী সাক্ষাৎকারে দু’ভাষীদের ভুল অনুবাদের কারণে আশ্রয়প্রার্থী অনেকেই নেগেটিভ ফলাফল ভোগ করে। নূরা এবং ফাহিমের সত্য ঘটনার মাধ্যমে আশ্রয় আবেদন কেন্দ্রিক বাস্তব অনেক কিছুই তুলে ধরা হয়েছে সিনেমাটিতে। পাশাপাশি ছবিতে এমন একটি শিশুর গল্প বলা হয়েছে, যে তার মা এবং বাবা ছাড়া বাঁচতে শিখেছে। বাড়ি থেকে অনেক দূরে, তার শিকড় এবং ভাষা থেকেও বিচ্ছিন্ন সে। ফাহিমের কাহিনী কেবল সেই সঙ্কীর্ণ বাস্তবতারই চলমান বিবরণ নয়, যা একটি ধারণা পোষণকারী সমাজকে বিবেচনা করে। কিন্তু, একজন বাবার দৃড় সংগ্রাম, অপরিচিত ব্যক্তির দয়া এবং সফল হওয়ার জন্য একটি ছোট ছেলের সাহসী ইচ্ছার এক হৃদয়দীপ্ত সাক্ষ্য এই ছবিটি।
ছবিটিতে ফাহিমের ভুমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন নারায়নগঞ্জের ছেলে আসাদ আহমেদ।বিখ্যাত ফরাসী অভিনেতা Gerard Depardieu ও অভিনেত্রী Isabelle Nanty এর সাথে আসাদ আহমেদ, মিজানুর রহমহান সহ বেশ কিছু বাংলাদেশী অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশী অভিনেতা অভিনেত্রি কেউ-ই এর আগে কোনদিন কোথাও অভিনয় করেননি।কিন্তু পরিচালক নিপুন দক্ষতায় তাদেরকে ফরাসী অভিনেতা অভিনেত্রীদের সাথে অভিনয় করার যোগ্য করে তুলেছেন।এজন্যে বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরী এ সিনেমাটি আরো বেশি বাস্তব মনে হয়েছিলো।
বিরতীহীন প্রদর্শনীর পর অভিনেতা মিজানুর রহমানকে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করেন উপস্থিত দর্শকরা।দর্শকদের প্রশ্নের উত্তরে চট্টগ্রামের ছেলে মিজান তার নানান অভিজ্ঞতা ও সিনেমা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।প্রদর্শনী আয়োজনের বিষয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলেন Secours Catholique ও CEDRE এর কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর সাথে।তারা বলেন, আমাদের এখানে ফরাসী ভাষা শেখার জন্যে অনেক বাংলাদেশী ভর্তি হয়। কিন্তু তারা অনেকেই ভাষা শেখাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়না, নিয়মিত ক্লাস করেনা।ভাষা শেখার গুরুত্ব তুলে ধরে তাদেরকে সচেতন করাই আমাদের এ প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য।