ঘুরে এলাম জার্মানি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৯:৩২,অপরাহ্ন ১৩ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৮৭২ বার পঠিত
ফাহিমা নিপা :
১০ দিনের কর্মছুটি পেয়েই সপরিবারে ছুটে গেলাম জোহানেস গুটেনবার্গের জন্মশহর মেইনজ ও পাশের শহর ফ্রাংকফুটে। ৩০ জুলাই সকাল ৭টা ২০ মিনিটে প্যারিসের গাঘদোলিস্ট থেকে টিজিবি ছাড়লো। একবার ডিসপ্লেতে দেখলাম ট্রেইন ছুটছে ৩১৭ কিলোমিটার ঘণ্টাবেগে। সকাল ১১টায় পৌঁছে গেলাম ফ্রাংকফুটের সেন্ট্রাল রেইলওয়ে স্টেশানে। রিসিভ করলেন আমাদের বন্ধু রিয়াজ মোহাম্মদ। নিজের গাড়িতে করে নিয়ে গেলেন তার চল্লিশ কিলোমিটার দূরে তার গ্রামশহরে। বললেন, তিনি যে ঘরে থাকেন তা ১৪শ শতকে নির্মিত। আমরাও অবাকবিস্ময়ে দেখলাম কাঠসুরকির তেতলা ঘরটির স্থাপত্যশিল্প। এর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে শতাধিক বছর পুরোনো চার্চ। যেখান থেকে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর আমাদের শুনতে হয়েছে ঘড়ির ঘণ্টাধ্বনি। দিনভর অনেক মজা হলো। বিকেলে রিয়াজ মোহাম্মদ আমাদের জন্যে বারবিকিউ পার্টি দিলেন তার গার্ডেন হাউজে।
পরের দিন ৩১ জুলাই ফিরে এলাম ফ্রাংকফুটে। আবারো মনে পড়ে গেলো গুটেনবার্গকে; যিনি প্রথম আবিস্কার করেছিলেন মুভ্যাবল মেটাল লেটার ফর প্রিন্টিং প্রেস। তাঁর হাতে প্রথম যে গ্রন্থ ছাপা হয়েছিল ১৪৫০ থেকে ১৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে, তা ছিলো ধর্মীয়গ্রন্থ বাইবেল, যাকে গুটেনবার্গ বাইবেল বলা হয়ে থাকে; যেটি এখন ওয়াশিংটন ডিসির লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের মহামূল্যবান সম্পদ। আজকের গ্রন্থসভ্যতার জনক সে কারণে এই গুটেনবার্গ।
গুটেনবার্গের প্রিন্টিং প্রেস আবিস্কারের পরপরই ফ্রাংকফুটের বইব্যবসায়ীদের উদ্যোগে প্রথম বইমেলা হয় এখন থেকে ৫৬৫ বছর আগে, ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে। সেই থেকে আজও এই শহরের ট্রেড ফেয়ার গ্রাউন্ডে হয়ে আসছে বইমেলা। বছরওয়ারী হিসাবে গতবছর অক্টোবরে হয়ে গেলো নিয়মিত বইমেলার ৭০ বছরপূর্তি উৎসব; যেখানে পৃথিবীর শতাধিক দেশের সাথে বাংলাদেশের লেখক ও বইব্যবসায়ীরাও অংশ নেন তাদের বই নিয়ে। সে জন্যে জার্মানির ফ্রাংকফুট শহরটির নাম পৃথিবীর প্রতিজন বইপ্রেমী মানুষ কমবেশি জানেন।
তবে দূর থেকে জানা আর কাছ থেকে একটি দেশ কিংবা একটি শহরকে ছুঁয়ে দেখার মধ্যে যে কী পরিমাণ ব্যবধান থাকে, তা ভ্রমণ না করলে উপলব্ধি করা যায় না। আসলে ফ্রাংকফুট সভ্যপৃথিবীর অন্যতম ঐতিহ্যের ধারকই শুধু নয়, এটি একটি পর্যটক আকর্ষক তিলোত্তমা নগরি; এর পরিচ্ছন্নতা ও শান্তসুনির্মল পরিবেশ যে কারো মন ভরে দেয়।
ফ্রাংকফুটকে আমেরিকার মেনহাটন সিটির সাথে তুলনা করেও বলা হয়ে থাকে ওয়ান অব দ্য মোস্ট ওয়াকেবল সিটি ইন জার্মানি। যে শহরের রুমাবার্গে হাজার বছরের পুরোনো স্থাপত্যশিল্পের সযত্ন সংরক্ষণ দেখার জন্যে প্রতিদিন ভিড় করেন পৃথিবীর হাজার মানুষ।
ফ্রাংকফুটে আছেন এশিয়া মহাদেশের বহু মানুষ, আছেন অনেক বাংলাদেশী। তাদের মধ্যে কয়েকজন ভারতীয়, একজন পাকিস্তানী ও তিনজন স্বদেশীর সাথে পরিচয় হলো। তারা সবাই খুবই সজ্জন, কর্মব্যস্ত জীবনে সম্পৃক্ত রয়েছেন; বিদেশে মানুষ যা প্রত্যাশা করে থাকে। এরপরও তারা আমাদেরকে সময় দিলেন, হাসি মুখে কথা বললেন। বিদেশে এটুকুতেই আমরা অনেক খুশি।