ব্রিটেনে নাগরিকত্ব পেতে পারেন এক লাখের বেশি বাংলাদেশি
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:২০:৫১,অপরাহ্ন ২৭ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ১৮৬১ বার পঠিত
জুয়েল রাজ, লন্ডন থেকে
দীর্ঘদিন ধরে যারা ব্রিটেনে নাগরিকত্ব বিহীন কিংবা কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাস করছেন, তাদের কপাল খুলতে পারে এবার। নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পার্লামেন্টে সেই ইঙ্গিতই দিলেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হকের এক প্রশ্নের জবাবে বরিস অবৈধ নাগরিকদের ব্যাপারে তার আন্তরিকতার কথা জানান। উল্লেখ্য ২০০৯ সালে লন্ডনের মেয়র থাকাকালে জনসন সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেছিলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে যারা ব্রিটেনে অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তাদের বৈধতা দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসলে একদিকে বৈধ শ্রমিক সঙ্কটের সুরাহা হবে, অপরদিকে তাদের আয় থেকে সরকারি কোষাগারে কর জমা পড়ার পরিমাণ বাড়বে। এতে দুই পক্ষই লাভবান হবে।
বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জনসনের সেই আহ্বানের কথা সামনে এনে লন্ডনের ইলিং এলাকা থেকে নির্বাচিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক তার উদ্দেশে বলেন, এখন তো আপনি প্রধানমন্ত্রী, এখন কি অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে আপনি প্রমাণ করবেন যে আপনার কথার সঙ্গে আমার কাজের মিল রয়েছে?
রূপার প্রশ্নের জবাবে বরিস জনসন বলেন, এটা সত্যি। আমি সরকারে থাকাবস্থায় বিষয়টি কয়েকবার উত্থাপন করেছি। তবে মন্ত্রীসভার বৈঠকেও উত্থাপন করলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি।
তিনি আরো বলেন, ব্রিটেনে বসবাসরত তালিকাবিহীন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে এ দেশ থেকে বের করে দিতে চায় সরকার। তবে তাদের বিষয়টি দেখা উচিত। আর এই বিষয়টি সরকার নীতিগতভাবে আন্তরিক বলেও দাবি করেন তিনি।
বরিস জনসন বলেন, যারা কোনো অপরাধে না জড়িয়ে বছরের পর বছর এখানে বসবাস করছেন, আমার মনে হয় আইনিভাবে তারা সঠিক অবস্থানে আছেন। তাদের নিয়ে অনেক জটিলতার ব্যাপার রয়েছে। যেমনটা আমরা দেখেছি উইন্ডরাশ এর ঘটনায়। আমি রুপা হকের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে চাই। হ্যাঁ, আমি মনে করি, যারা এ দেশে বছরের পর বছর কোনো অপরাধে না জড়িয়ে বসবাস করছে, কাজ করছে কিন্তু ট্যাক্স দিতে পারছে না, তাদের বিষয়টি দেখা উচিত। সত্যি বলতে আইন এরই মধ্যে তাদের থাকার অধিকার দিয়েছে। রুপা হক যেই নীতির কথা বলছেন তার আগে, তাদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়ার আগে আমাদের অর্থনৈতিক সুবিধা অসুবিধা দেখতে হবে।
যদি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা কর হয়। তাহলে প্রায় এক লাখের বেশি বাংলাদেশি ব্রিটেনে বৈধতা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যারা বছরের পর ধরে ব্রিটেনে বসবাস করছেন, কিন্তু সরকারের খাতায় তাদের নাম নেই।
২০০০ সালে ‘ওভার স্টেয়ার রেগুলেশন ২০০০’ নামে আইন করে স্বরাষ্ট্র দপ্তর নীতিমালার মধ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ব্রিটেনে বসবাসের সুযোগ দিয়েছিল। তারপর জুলাই ২০০৬ সালে আটকে পড়া চার লাখ ৫০ হাজার ফাইলের ওপর পাঁচ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা স্বরাষ্ট্র দপ্তর গ্রহণ করে, যা বহুলভাবে ‘লিগ্যাসি’ নামে পরিচিত।
তার মধ্যে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষকে বিভিন্নভাবে বৈধতা দেওয়া হয় এবং ফাইলগুলো বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রত্যাখ্যান করে ২০১১ সালে লিগেসির পরিসমাপ্তি ঘটে।
এর আগে ২০১০ সালের ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির তৎকালীন প্রধান নিক ক্লেগ ব্রিটেনে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিভিন্ন শর্তের মাধ্যমে বৈধতা প্রদানের প্রস্তাব করেছিলেন, যার নাম ছিল ‘রুট টু সিটিজেনশিপ’। তার প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো ছিল, আবেদনকারীকে যুক্তরাজ্যে অন্তত ১০ বছর বসবাসের প্রমাণ থাকতে হবে এবং কোনো অপরাধের রেকর্ড থাকা যাবে না।
আবেদনকারীকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হবে। এছাড়া তাকে একটি নির্ধারিত পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব অর্জনের নীতিমালা প্রদান করা হবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেটা পূরণ করতে হবে।