পরিবারে আদরের নাম ছিলো ‘পেয়ারা’, হতে চেয়েছিলেন উকিল
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৯:৪১,অপরাহ্ন ১৪ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪৬৪ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্কঃ
রবিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ খবর নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল সুভ রায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। সাবেক এই সামরিক শাসককে নিয়ে ‘হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ: জেনারেল থেকে রাজনীতিক হিসেবে উত্থান ও আস্থার সংকট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি নিউজ বাংলা। সেই প্রতিবেদন থেকে বাছাইকৃত অংশ তুলে ধরা হলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে জেনারেল এরশাদের নয় বছরের শাসনের পতন হলেও তিনি রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছেন। তিনি সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখলের পর জাতীয় পার্টি নামে দল গঠন করেন। তবে তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে অন্য সব দলের বিরোধীতার বিষয়টি ছিল তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করাসহ কিছু সংস্কারের পদক্ষেপ নিলেও তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। জেনারেল এরশাদের শাসনের সময় ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী আনা হয়। শেষপর্যন্ত তার সরকারের পতনের পর তিনি জেলে গিয়েও সবদলের অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং সেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসন পেয়ে ভোটের রাজনীতিতে একটা প্রভাব ফেলেছিল।
জেনারেল এরশাদের ঘনিষ্ট ছিলেন এমন একজন রাজনীতিক , যিনি পরে অন্য দলে গেছেন, তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আন্দোলনের মুখে জেনারেল এরশাদকে যখন ক্ষমতা ছাড়তে হয়, তখন তাকে বিদেশে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। তিনি জেলে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছেলেন। এটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ছিল বলে ঐ রাজনীতিক মনে করেন।
তিনি উল্লেখ করেছেন, জেনারেল এরশাদ বিদেশে না গিয়ে দেশে ছিলেন বলেই পরে রাজনীতিতে টিকে গেছেন।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, প্রায় তিন দশক ধরে দেশের ভোটের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির একটা প্রভাব থাকলেও বিভিন্ন সময় জেনারেল এরশাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে দলটি আস্থার সংকটেও পড়েছে।
এরশাদের পরিবারিক নাম
তার বাবা-মা এবং ভাই বোন বা কাছের আত্নীয়রা তাকে ‘পেয়ারা’ নামে ডাকতেন। এটি তার ডাক নাম। জি এম কাদের জানিয়েছেন, তাদের চার ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ছিলেন মেজো। সবার বড় বোনের নাম ছিল পেয়ারী এবং সেই নামের সাথে মিলিয়ে এরশাদের পরিবারে নাম ছিল পেয়ারা।
তাদের এক ভাই এবং দুই বোন আগেই মারা গেছেন। কাদের বলেছেন, তাদের বাবা মকবুল হোসেন পেশায় আইনজীবী ছিলেন এবং তিনি বাড়ি করেছিলেন কুচবিহারের দিনহাটায়। আর তাদের মা মজিরা খাতুন গৃহিনী ছিলেন। সে কারণে কুচবিহারের দিনহাটাতেই তার বেড়ে ওঠা।
জেনারেল এরশাদের প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির নেত্রী এবং গত সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন।
নানা গুঞ্জনের প্রেক্ষাপটে ২০০০ সালে জেনারেল এরশাদ একজন ফ্যাশন ডিজাইনার বিদিশা ইসলামকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর এই নারী বিদিশা এরশাদ নামে পরিচিত হন। তবে সেই ঘর বেশি দিন টেকেনি।
এরশাদ উকিল হতে চেয়েছিলেন
জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জন্মগ্রহণ করেন রংপুরে তার নানার বাড়িতে ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তবে তার শৈশব এবং স্কুলজীবন কেটেছে বাবা মা’র সাথে ভারতের কুচবিহারের দিনহাটায়। সেখান থেকেই তিনি এসএসসি পাস করেছেন। স্কুল শেষ করে তিনি রংপুরে কারমাইল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন।
তার ভাই এবং জাতীয় পার্টির নেতা জি এম কাদের জানিয়েছেন, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী নেয়ার পর উকিল হওয়ার চিন্তা থেকে ল’কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু আইন পড়া শেষ হওয়ার আগেই ১৯৫২ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়ে তাতে যোগ দেন।
জেনারেল এরশাদের ছাত্রজীবন কেমন ছিল?
জি এম কাদের জানিয়েছেন, তার ভাই এরশাদের খেলাধূলায় আগ্রহ বেশি ছিল। তিনি ছাত্রজীবনে ফুটবলার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তখন ফুটবল জনপ্রিয় খেলা ছিল।
স্কুল এবং কলেজ জীবনে এরশাদ রংপুর অঞ্চলে বিভিন্ন ক্লাবে ভাড়ায়ও ফুটবল খেলতে যেতেন। এছাড়া তিনি তখন থেকেই কবিতা লিখতেন এবং কারমাইকেল কলেজের সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছিলেন বলে জি এম কাদের জানান। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক বাংলায় তার অনেক কবিতা ছাপা হয়েছিল। তা নিয়ে অবশ্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম আলোচনা ছিল।
তিনি আত্মজীবনী লিখেছেন। সেই বইয়ের নাম, ‘আমার কর্ম আমার জীবন’। এছাড়া তিনি কয়েকটি কবিতার বইও বের করেছেন।
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বিবিসি’র সাংবাদিক কাদির কল্লোল