ব্রিটেনে ব্রেক্সিট বিভ্রাট, শঙ্কিত বাংলাদেশিরাও
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৬:১৯,অপরাহ্ন ১২ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪০৫ বার পঠিত
প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকা জনসন বলছেন, নো ডিল ব্রেক্সিট তিনি দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন। তবে দলের ভেতরে বাইরেশ তার সমালোচকদের বক্তব্য হচ্ছে, ব্রেক্সিট নিয়ে বরিস যা বলছেন তা আসলে বর্ণবাদে সমালোচিত ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজের বক্তব্য। ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রেক্সিট ইস্যুকে ঘিরে ব্রিটেনের রাজনীতির নাটাই এবার সরাসরি উগ্র ডানপন্থী নাইজেল ফারাজদের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে। আর নাইজেল ফারাজদের পরিকল্পিত ব্রেক্সিটের মূল লক্ষ্যপথটিই বর্ণবাদী। অশ্বেতাঙ্গ ও মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষের জেরে দেশটির অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফারাজ তুমুল সমালোচিত।
নাইজেল এরইমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তারা যে ধরনের ব্রেক্সিট চান, জনসন নির্বাচিত হলে ঠিক সেই রকমের ব্রেক্সিট সম্ভব। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হবে কিংবা চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটে কী থাকবে তার কিছুই জনসন কিংবা ফারাজ খোলাসা করছেন না। সবশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে ব্রিটেনে প্রায় সাড়ে চার লাখ ব্রিটিশ বাংলাদেশির বসবাস। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নেই এমন বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিরাও ব্রিটেনে বসবাস করেন। এর বাইরে আছেন দেশটিতে বসবাসের বৈধতাহীন বাংলাদেশিরাও। সবমিলে মোটামোটি ৬ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন যুক্তরাজ্যে।
শেষ পর্যন্ত ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন ব্রিটিশ রাজনীতিকরাও। লন্ডনের নিউহাম বারার ডেপুটি কেবিনেট মেম্বার ও কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান জসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘থেরেসা মে’র ব্যর্থতার পর পার্লামেন্টে নতুন যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি ব্রেক্সিট বিল নিয়ে কী করবেন, সেটাই প্রশ্ন। আমার মতে সবার আগে দেশে আরেকটি সাধারণ নির্বাচন দরকার। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলে ব্রিটেন চলতে পারবে না, এটা অমূলক ধারণা।’
ব্রিটিশ পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হাবিব সন্স ক্যাপিটালের চিফ স্ট্রাটেজিস্ট আহমেদ হুমায়ূন হাবীবের আশঙ্কা, ব্রেক্সিট বিশ্ব রাজনীতিতে ব্রিটেনের ক্ষমতাকে খর্ব করবে। পরবর্তী দশ বছরে অর্থনীতির আকার দশ থেকে পনেরো শতাংশ ছোট হবে। যার ফল ভোগ করবে সাধারণ মানুষ। সে কারণে ব্রেক্সিট দীর্ঘমেয়াদে ব্রিটেনের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
আমদানিকারক ও মানি ট্রান্সফার ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সমীক্ষার ফলাফল বলছে, ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ব্রিটেনের অর্থনীতি শুরুতেই বড় চাপে পড়বে, এমন নয়। ইউরোর থেকে পাউন্ডের দাম বেশ খানিকটা বেশি ছিল। সেই দাম অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে। ফলে ইউরোর সঙ্গে পাউন্ডের বিনিময়মূল্যের ব্যবধানও কমে গেছে। ২০১৬ সালে যেখানে ১০০ ইউরোর বিনিময় মূল্য ৭০ ব্রিটিশ পাউন্ডের সমান ছিল, ২০১৯ সালে এসে সেই ১০০ ইউরো ৮৯ ব্রিটিশ পাউন্ডের সমান হয়েছে। ব্রেক্সিট কার্যকর হলে আরও এক দফায় ইউরোর বিপরীতে পাউন্ডের দাম কমবে। এই অবমূল্যায়নের ফলে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে।
ব্রিটেনে তিন দশক ধরে বসবাসরত কলেজ শিক্ষক ও লেখক ড. রেনু লুৎফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃটিশ আইনে ন্যায়বিচার না পেলে এখন ইউরোপীয় আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ আছে। ব্রেক্সিটের পর সে সুযোগ থাকবে না। জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে। নতুন দেশের সঙ্গে ব্যবসার সুবিধা থাকবে বলা হলেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশিরা মনে করেছিলেন তারা বের হলেই দেশ থেকে রেস্টুরেন্ট স্টাফ আনতে পারবেন। আসলে বিষয়টা এতোটা সহজ নয়। বাংলাদেশে দক্ষ শ্রমিকদের অভাব রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশিদের জন্য তেমন সুযোগ আছে বলে মনে করছি না। নতুন সম্ভাবনার পথ খুঁজতে হবে।’
প্রবীণ কমিউনিটি নেতা ও ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব কে এম আবু তাহির চৌধুরী বলেন, ‘ব্রেক্সিট বাস্তবায়িত হলে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়বে।’