ঢাকায় ফেরার সম্ভাবনা নেই ব্রিটিশ ভিসা অফিস
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২২:২৮,অপরাহ্ন ২৮ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ৬৩৩ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্ক :
যুক্তরাজ্যের ভিসা অফিস দিল্লি থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন।
বুধবার পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেনে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব হলে আয়োজিত ‘ডায়লগ উইথ জার্নালিস্ট শীর্ষক’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতার পর ব্রিটিশ ভিসা প্রসেসিং ব্যবস্থা দিল্লিতে স্থানান্তর এবং ভিসা দেওয়ায় হয়রানি ও বৈষম্য নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে রবার্ট ডিকশন এ কথা জানান।
তিনি আরও জানান, তারা প্রাপ্ত আবেদনের শতকরা ৭০ ভাগ ভিসা ইস্যু করছেন। দিল্লিতে ভিসা প্রসেসিং কার্যক্রম চললেও এতে ভারতীয়দের কোনও হাত নেই। সেখানকার দূতাবাসের ব্রিটিশ কর্মকর্তারাই সিদ্ধান্ত নেন।
ভিসা অফিস ঢাকা ফিরিয়ে আনার কোনো সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা হলে ভিসার খরচ বেড়ে যাবে।”
২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনে সব ধরনের ভিসা প্রসেসিং বন্ধ করে দেয় ব্রিটিশ সরকার।
ওই বছরেরই ১ অক্টোবর থেকে জমা পড়া ভিসা সংক্রান্ত আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া বন্ধ করে দেয় ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন।
সেই সময় ব্রিটিশ সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী ‘কারি লাইফ’ এবং ‘এশিয়ান ভয়েস’ নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য ইলেক্ট্রনিক স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। তাছাড়া সিলেটেও মিছিল-মিটিং হয়।
এর আগে রাষ্ট্রদূত ডিকসন তার বক্তৃায় বলেন, “আগামী ২০২১ সালে ব্রিটেন ও স্বাধীন বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে ব্রিটেন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে নতুন করে ঝালাই করে এর ভিতকে আরো সুদৃঢ় করতে চায়। আর এই সম্পর্কের অর্ধ শতাব্দী উদযাপনের জন্য ব্রিটিশ ফরেন অফিস দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায় ছাড়াও ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির সক্রিয় ভূমিকা আশা করে।”
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ জুবায়েরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ছয়টি অগ্রাধিকার উল্লেখ করে তিনি তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
হাইকমিশনার ডিকসন আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত হতে হবে।”
এক্ষেত্রে রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বাংলাদেশে তার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, বহু সাংবাদিক সরাসরি আমাদেরকে পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাদের ওপর চাপ ও ঝুঁকির কথা ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন।
এক্ষেত্রে তিনি নিজেই রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের সূচকে বাংলাদেশের ১৫০তম অবস্থান উল্লেখ করে বলেন, “এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। বাংলাদেশে গন মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল কনফারেন্স অন প্রেস ফ্রিডম-এ আলোচিত হবে।”
একই সাথে হাইকমিশনার অর্থনৈতিক উন্নতির প্রশংসা করে বলেন, “১৫ বছরে এই সাফল্য যথার্থভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। দেশটি নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। এক দেশের সাথে আরেক দেশের পার্টনারশিপেও কিছুটা ব্যবধান থাকে, ছোট-বড় ইস্যু থাকে। আমার অগ্রাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশের সাথে ব্রিটেনের পার্টনারশিপের ক্ষেত্রে সমতা আনা।
তিনি বাংলাদেশের সাথে ব্রিটেনের বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বলেন, “বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে রপ্তানির পরিমাণ ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন পাউন্ড। অন্যদিকে বাংলাদেশে ব্রিটেন রপ্তানি করছে প্রায় ৪ শ মিলিয়ন পাউন্ড।“
ব্রিটেনের এই পিছিয়ে থাকার জায়গায় সমতা ফিরিয়ে আনার উপর তিনি গুরুত্ব দেন তিনি।
ডিকসন বলেন, “বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করেছেন। সেই সূত্রে ব্রিটেনের উন্নত সেবা ও পণ্যের বাজার সৃষ্টি হবে বাংলাদেশে।
এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, ব্রিটেনের মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজারি কমিটি (ম্যাক) বাইরের দেশ থেকে শেফ আনার ক্ষেত্রে যে সুপারিশ করেছে তা পরিষ্কার, তবে এ নিয়ে বিভ্রান্তি যাতে না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশে সাজাপ্রাপ্ত একাধিক ব্যক্তিকে ব্রিটেন থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান ব্রিটিশ হাই কমিশনার।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ডিকসন বলেন, “এক্ষেত্রে বাংলাদেশ উদার ও অনন্য ভূমিকা রাখছে। ব্রিটেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রত্যাবর্তনের পক্ষে, তবে এটি যেন হয় স্বেচ্ছায় এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত সাপেক্ষে।“
হাইকমিশনার জানান, ব্রিটেন মনে করে আরাকান এখনো নিরাপদ নয়। এছাড়া সামগ্রিকভাবে সবসময়ই মিয়ানমারের ভূমিকার নিন্দা জানাচ্ছে যুক্তরাজ্য।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের সাফল্যের কথাও উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনারের পরিচিতি পাঠ করেন ক্লাবের নির্বাহী সদস্য নাজমুল ইসলাম।
প্রেস ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারিরা, সিনিয়র সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের শেষপর্বে ক্লাবের নির্বাহী সদস্যরা ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে ক্লাবের মনোগ্রামখচিত মগ ও ব্যাগ তুলে দেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রেস ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক চৌধুরী, অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি মতিউর রহমান চৌধুরী, কমিউনিকেশন্স সেক্রেটারি আবদুল কাইয়ুম, ট্রেনিং সেক্রেটারি ইব্রাহিম খলিল, ইভেন্ট সেক্রেটারি রেজাউল করিম মৃধা, নির্বাহী সদস্য আবদুল কাইয়ুম, নাজমুল ইসাম ও পলি রহমান।