অ্যারিজোনা–কলোরাডো সীমান্তে অবস্থিত কারি অ্যান্ড কাবাব রেস্টুরেন্টের বাংলাদেশি মালিক বর্ণবাদী মামলার আপস নিষ্পত্তিতে ছয় লাখ ৭৫ হাজার ডলার পাচ্ছেন। জমির মালিক বর্ণবাদী আচরণ করায় জুনেদ আহমেদ খাঁন ও তার ছেলের সঙ্গে আপস নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হন।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার দাড়িপাতন গ্রামের জুনেদ আহমেদ খাঁন প্রায় ৩৫ বছর আগে আমেরিকায় আসেন। অ্যাভিয়েশনে স্নাতক করার পর কলোরাডোতে আমেরিকান এয়ারফোর্স ডিভিশনের অধীনে চাকরি শুরু করেন।
কয়েক বছর চাকরির পর স্বাধীনচেতা জুনেদ খাঁন কলোরাডোতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর ব্যবসায় সাফল্য আসতে থাকে। নিজের পারদর্শিতায় একে একে ১৭টি ‘কারি অ্যান্ড কাবাব রেস্টুরেন্ট’–এর শাখা বিস্তৃত করতে সক্ষম হন। ১৭টি রেস্তোরাঁ পরিচালনায় এক সময় হাঁপিয়ে উঠেন তিনি। কারিগর বা কর্মী সমস্যার ভোগান্তিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল তাঁকে। এক পর্যায়টি রেস্তোরাঁ বিক্রি করে দেন। কয়েক বছর ধরে ছেলে রাসাদ খাঁনকে দিয়ে আবার রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেন। অ্যারিজোনা কলোরাডোতে ‘কারি অ্যান্ড কাবাব’ বিখ্যাত ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁ হিসেবে খ্যাতি পায়।
২০১৭ সালে তাদের রেস্তোরাঁর পাশাপাশি একটি আমেরিকান রেস্তোরাঁ বিক্রির তালিকায় আসে। জুনেদ খাঁনের ছেলে রাসাদ খাঁন ওই রেস্তোরাঁ ৬০ হাজার ডলার মূল্য কিনবেন বলে দাম নির্ধারণ হয়। মূল্যবাবদ তিনি ১২ হাজার ডলার অগ্রিমও দেন। রেস্তোরাঁর মালিক ছিলেন ক্রেগ। তিনি ছিলেন শুধু রেস্তোরাঁটির ব্যবসার মালিক। তিনি জায়গার মালিক ছিলেন না। তাই আইনজীবীর মাধ্যমে অগ্রিম লেনদেন করেন জুনেদ খাঁন ও রাসাদ খাঁন। দুই মাস পার হওয়ার পর ক্রেগকে রেস্তোরাঁর মালিকানা হস্তান্তর করার ব্যাপারে তাগিদ দিলে তিনি বলেন, জায়গার মালিক পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, মুসলিম পরিবারের কাছে মালিক জমি ইজারা দেবে না। জুনেদ খাঁন ও রাসাদ খাঁনকে তিনি প্রমাণস্বরূপ জমির মালিকের সঙ্গে ফোনালাপ রেকর্ড করেন এবং আইনজীবীর অফিসে গিয়ে রেকর্ড বাজিয়ে শোনান। জুনেদ খাঁন ও রাসেদ খাঁনের আইনজীবী জায়গার মালিকের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগে মামলা করেন।
প্রায় দেড় বছর আদালতে মামলা চলার পর গত সপ্তাহে বর্ণবাদী জমির মালিক ছয় লাখ পঁচাত্তর হাজার ডলারে মামলার আপস করতে বাধ্য হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই মামলার আপস নিষ্পত্তির খবর আমেরিকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়।
জুনেদ খাঁন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে বলেন, বর্ণবাদী মামলায় তাদের সঙ্গে জমির মালিকের আপসের ঘটনা আমেরিকার মুসলিম পরিবারের জন্য বিরাট বিজয়। এ ধরনের সমস্যা হলে যো কারও প্রমাণাদি সাপেক্ষে আইনের আশ্রয় নেওয়া উত্তম। এতে কমিউনিটি উপকৃত হবে। আমেরিকায় বর্ণবাদকে মারাত্মক অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়।