মাহে রমজানে আসুন নিজেকে বদলে ফেলি
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৬:৫৪,অপরাহ্ন ১১ মে ২০১৯ | সংবাদটি ৪৪০ বার পঠিত
এজে ইকবাল আহমদ :
প্রতিবছরই আসে পবিত্র মাহে রমজান। আমরা চেষ্টা করি বেশি বেশি ইবাদত করার। উদ্দেশ্য একটাই, যাতে গুনাহর পরিমাণ কম হয়। কারণ মাহে রমজানে সবকিছুই ৭০ গুণ বেড়ে যায়।
কেউ এ মাসে একটা ফরজ আদায় করলে যেমন বছরের অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়, তেমনি এ মাসে একটা গুনাহের কাজ করলেও অন্য মাসের ৭০টি গুনাহ্ তার আমলনামায় যোগ হয়।
কিন্তু সমস্যা হল রোজা আসে, আবার বিদায় নেয়। আমাদের স্বভাবের পরিবর্তন হয় না কেন? এটা বুঝলেই সমাজে ও মানুষের দিলে বা কলবে পরিবর্তন আসবে।
ইবাদতের কতগুলো কঠিন শর্ত রয়েছে যেগুলো পালন করতেই হবে। যেমন- তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে হবে। এ তাকওয়া আসবে তখনই যখন আপনি গিবত বা পরনিন্দা করবেন না, হারাম উপার্জন করবেন না। সুদ, ঘুষ, হিংসা থেকে দূরে থাকবেন। সমাজে দেখা যাচ্ছে পবিত্র রমজান মাসেও ঘুষ খাওয়া কমে না, মজুদদারি কমে না, অপরের হক জেনে-শুনে নষ্ট করছি। কারণটা কী?
আমাদের সমাজে, মহল্লায় ও রাষ্ট্রে তাকওয়া অর্জনে সবচেয়ে বড় বাধা গিবত, হারাম খাওয়া এবং হিংসা করা। গিবত মানবদেহের জন্য ক্যান্সারের মতো। ক্যান্সার যেমন শরীরের কোষগুলোকে খেয়ে ফেলে, গিবত তেমনি কুরে কুরে একজন মুসলমানের সব নেকি খেয়ে ফেলে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা একে অপরের গিবত কর না। তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ কর?’- সূরা হুজরাত (৪৯) : ১২।
নামাজ কবুল হওয়ার প্রতিবন্ধক হল গিবত। তাহলে পবিত্র রমজানে এত কষ্ট করে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ে লাভ কী হবে?
তার পর আসি হালাল উপার্জন সম্পর্কে। এ ব্যাপারে বহু হাদিস রয়েছে। হাদিসে আছে, ‘হালাল রুজি ইবাদতের পূর্বশর্ত।’ (মুসলিম : ২২১৮)। মাহে রমজানে অনেকে অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে ফেতরা, জাকাত দিয়ে থাকেন। হজরত (সা.) এরশাদ করেন, ‘হারাম উপার্জনের সদকা কবুল হয় না।’ (মুসলিম : ৫৫৭)। আরও আছে, ‘হারাম খেয়ে যে শরীর হৃষ্টপুষ্ট হয় তা জান্নাতে যাবে না।’ (তারগিব : ৯৬৭)।
হিংসা করলেও কোনো ইবাদত কবুল হবে না। বলা হয়, হিংসা সাপের বিষের চেয়েও ভয়াবহ। সাপ কখনও নিজের বিষে মরে না, কিন্তু হিংসুক হিংসায় জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায়।
কাজেই গিবত, হারাম খাওয়া এবং হিংসা- এ তিনটি কঠিন কবিরা গুনাহ্ থেকে বাঁচতে পারলে লোভ, অহঙ্কার, পরের হক নষ্ট, অশ্লীলতা ইত্যাদি পাপগুলো থেকে আল্লাহ পাকই রক্ষা করবেন, যদি আমাদের নিয়ত সহিহ্ হয়।
অথচ এ সত্যি কথা আজকের বেশিরভাগ ইমাম, মাওলানা সাহেব মসজিদে বলেন না। এ সব কথা বলে মানুষকে সচেতন করবেন তো আলেম ওলামারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন। অথচ তাদের সত্য কথা বলা উচিত। কালামে পাকে আছে, ‘আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে ফেলেন ও তার বাণী দিয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন।’ (৪২, সূরা শূরা : ২৪)। আরও বর্ণিত আছে, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিও না আর জেনে-শুনে সত্য গোপন করো না।’ ( ২ সূরা বাকারা : ৪২)। অথচ প্রায় সব ইমাম, মাওলানারা নিজেদের স্বার্থে চুপ করে থাকেন।
আজকাল মসজিদ কমিটিগুলো দখলদারদের হাতে বন্দি। একশ্রেণীর কুটিল চরিত্রের প্রভাবশালী নিয়ন্ত্রণ করছে অধিকাংশ মসজিদ। তারাই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ইত্যাদি। মসজিদ এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আর্থিক লাভ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেখা যায় বড় নদীর আশপাশে জমি দখল করেই মসজিদ বানায়, পাশেই তিনতলা মাদ্রাসা ভবন তৈরি করা হয়েছে। উদ্দেশ্য যাতে পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ করা না যায়। ধর্মের নামে মানুষের ওপর জুলুম করছে একশ্রেণীর অল্প শিক্ষিত মোল্লা মুনশিরা। পবিত্র ধর্ম ইসলাম আজ অপবিত্র হচ্ছে স্বজনপ্রীতিতে। এসব করলে রমজানে মানুষ শুদ্ধ হবে কীভাবে?
মাহে রমজান হল তাকওয়া অর্জনের মাস। বছরের ১১ মাস হারাম খেয়ে, গিবত করে আর পকেটে ঘুষ নিয়ে শুধু পবিত্র মাহে রমজানে রোজা রেখে, আর রাতে দামি নকশাদার পাঞ্জাবি গায়ে ২০ রাকাত তারাবিহ পড়ে চরিত্র বদলানো যাবে কি? মন পাল্টানো যাবে কী?
হে সায়েম, প্রিয় ভাই আমার আসুন, খাস দিলে তওবা করি। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘কিন্তু যারা তওবা করে আর নিজেদের সংশোধন করে এবং আল্লাহ্র আয়াতকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে, এরাই তো তারা যাদের আমি ক্ষমা করি এবং আমি ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু।’ (২, সূরা বাকারা : ১৬০)। এখনই তওবা করে পবিত্র হই, তাকওয়া সম্পন্ন মানুষ হই। পবিত্র মাহে রমজানে নিজেদের এমনভাবে বদলাই যেন বছরের বাকি মাসগুলোয়ও মুমিন বান্দার মতো জীবন কাটাতে পারি।
লেখক : কলামিস্ট