নিউইয়র্কে আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের দশকপূর্তিতে মিলনমেলা
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৪:২৬,অপরাহ্ন ০৭ মে ২০১৯ | সংবাদটি ৪৪২ বার পঠিত
বাংলাদেশ এগিয়ে চলার সমর্থনে আমেরিকায় প্রবাসীদের জনমত আরো সুসংহত করার পাশাপাশি বিনিয়োগে আগ্রহীদের আরো উৎসাহিত করতে বাংলা ভাষার মার্কিন গণমাধ্যমগুলো একযোগে কাজ করবে; আর এর মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরা বাংলাদেশ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে-এমন সংকল্প ব্যক্ত করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি আমেরিকান সাংবাদিকদের সংগঠন ‘আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের (এবিপিসি) এক দশকপূর্তি উৎসব হয়েছে। একই দিনে হয়েছে নতুন কমিটির (২০১৯-২০) অভিষেক।
স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে বেলজিনো পার্টি হলে আয়োজিত এ উৎসবে সাংবাদিক ছাড়াও কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সমাজকর্মী, রাজনীতিকদের বিপুল সমাগম ঘটে। একপর্যায়ে অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় বাংলাদেশিদের মিলনমেলায়। উৎসবটি নিবেদিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত বাংলাদেশি আমেরিকান রাজনীতিকদের প্রতি।
মূলধারায় বিশেষ স্থানে অধিষ্ঠিত এসব জনপ্রতিনিধিগণকে প্রেসক্লাবের সম্মাননা ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন নিউইয়র্কে বসবাসরত ২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা। একইসঙ্গে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত পাঁচজন প্রবাসীকে। এসব ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি. ল্যু, স্টেট অ্যাসেম্বলিওমান ক্যাটালিনা ক্রুজ, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধি স্থায়ী মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূরএলাহি মিনা, কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং-এর প্রতিনিধি জর্ডান গোল্ডেস। অনুষ্ঠানে কমিউনিটিকে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় উজ্জীবিত রাখতে নিরলসভাবে কর্মরত আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবকে বিশেষ কংগ্রেসনাল এবং জর্জিয়া স্টেটের প্রক্লেমেশন প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীতের পর সকলে একমিনিট দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপরই স্বাগত বক্তব্য দেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম। এরপর শুরু হয় ‘নৃত্যাঞ্জলি ড্যান্স গ্রুপের নৃত্যনাট্য। বাংলাদেশের ষড়ঋতুভিত্তিক এ অনুষ্ঠান সকলে মন্ত্রমুগ্ধের মত উপভোগ করেন।
পরবর্তী পর্বে ক্লাবের নতুন কমিটির কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহম্মেদ। এ সময় নির্বাচন কমিশনের দুই সদস্য মিশুক সেলিম এবং জাহেদ শরিফ উপস্থিত ছিলেন। অভিষিক্ত কর্মকর্তারা হলেন সভাপতি-লাবলু আনসার, সিনিয়র-সহ-সভাপতি মীর ই শিবলী, সহ-সভাপতি আকবর হায়দার কিরণ, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, কোষাধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক কানু দত্ত, প্রচার সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ফারুক রহমান, নির্বাহী সদস্য শিব্বীর আহমেদ, আজিমউদ্দিন অভি, ফারহানা চৌধুরী ও তপন চৌধুরী।
দশকপূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা ‘অবিচল’র মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। এরপরই প্রেসক্লাবের ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয় বিপুল করতালির মধ্যে।
দ্বিতীয় পর্বে প্রেসক্লাবের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও শিল্পপতি জহিরুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মূলধারার রাজনীতিক আক্তার হোসেন বাদল, আর্ত মানবতার সেবায় নিয়োজিত ‘আব্দুল কাদের মিয়া ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কাদের মিয়া, কমিউনিটি উন্নয়নে নিবেদিত পিপল এন টেক’র সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ এবং যুক্তরাষ্ট্র সফররত জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনকে। এরপর প্রেসক্লাবের সেরা সদস্য হিসেবে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় চ্যানেল আই উত্তর আমেরিকার সিইও মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহম্মেদকে। দশকপূর্তি উৎসব আয়োজনে বিশেষ সহায়তার জন্যে সম্মানা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় ফটো সাংবাদিক শাহ জে. চৌধুরীকে।
বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্য থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্লাবের বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য সিনেটর শেখ রহমান, নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান, হাডসন সিটির কাউন্সিলম্যান শেরশাহ মিজান, পেনসিলভেনিয়া স্টেটের মিলবোর্ন বরোর ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরল হাসান, কাউন্সিলম্যান মুনসুর আলী, আপারডারবি সিটি কাউন্সিলম্যান শেখ সিদ্দিক। এসব ক্রেস্ট বিপুল করতালির মধ্যে হস্তান্তর করেন বাংলাদেশের একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা হলেন কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান, মেজর (অব.) মঞ্জুর আহমেদ বীর প্রতিক, গোলাম মোস্তফা খান মিনাজ, রেজাউল বাবী, আবুল বাশার চুন্নু, নূরল ইসলাম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মোজাম্মেল হক, রুহুল আমিন, আব্দুস সাদিক, সানাউল্লাহ, ফিরোজুল ইসলাম পাটোয়ারী, কামরুজ্জামান, খোরশেদ আনোয়ার বাবলু, শহিদুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, মলিন নাথ, দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস এবং এমদাদুল হক।
প্রবাসে এই প্রথম মূলধারায় বাংলাদেশি-আমেরিকানদের সম্মাননা জানানো হলো মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যম। তাই উপস্থিত সকলেই প্রেসক্লাবের প্রশংসা করেন এবং দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানান।
আলোচনা পর্বে সূচনা বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার। উপস্থিত সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লাবলু বলেন, ‘২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবের কর্মকাণ্ড সবসময়ই আবর্তিত হয়েছে সর্বস্তরের প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে। একইসঙ্গে বাংলাদেশকে বহুজাতিক এই সমাজে আরো বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপনেও সক্রিয় রয়েছেন ক্লাবের সদস্যরা। সামনের দিনেও সে চেতনায় অব্যাহত থাকবে নতুন কমিটির দায়িত্ব পালনের প্রতিটি পর্বে।’
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. নীনা আহমেদ, জর্জিয়া স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. জহিরুল ইসলাম, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূরএলাহি মিনা, কমিউনিটি লিডার ও মূলধারার ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদল, পিপল এন টেকের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিফ, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের মিয়া, অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান-অমেরিকান লেবারের (অ্যাসাল) সভাপতি মাফ মিসবাহউদ্দিন, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং-এর প্রতিনিধি জর্ডান গোল্ডেস প্রমুখ।

যুক্তরাষ্ট্র সফররত জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
পুরো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন প্রবাসের জনপ্রিয় উপস্থাপক ফাতেমা সাহাব রুমা এবং প্রেসক্লাবের সদস্য শারমীন রেজা ইভা।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বাংলাদেশের খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীকে ‘আজীবন সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। সৈয়দ আব্দুল হাদীর গানের মধ্য দিয়ে মধ্যরাতে এই উৎসবের সমাপ্ত ঘটার আগে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান এবং বাউল শিল্পী শাহ মাহবুব।