রানু মণ্ডলের এই পরিণতির নেপথ্যে কী খুঁজে পেলেন বাংলাদেশি তরুণ
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৩:৫৯,অপরাহ্ন ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ৩৭১ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্কঃ
রানু মণ্ডল গেয়েছেন বলিউডে, হিমেশ রেশামিয়া তাঁকে রানাঘাট থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন মুম্বাই। বলিউডের চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন, এরপর স্বাভাবিকভাবেই রানু মণ্ডলের জীবনে নতুন বাঁক তৈরি হওয়ার কথা ছিল। হিমেশ রেশামিয়াও তাকে অনেক টাকা দিয়েছিলেন, সেসব দিয়েও নিজের জীবন বদলে ফেলতে পারতেন। অন্তত রানাঘাট স্টেশনে শুয়ে থাকা রানু মণ্ডলকে নিশ্চয়ই আর প্ল্যাটফর্মে কিংবা তার ভাঙা ঘরে শুয়ে থাকতে হবে না- এমনটা নিশ্চিত করেই বলতে পারেন সবাই।
কিন্তু সে ধারণাকে মিথ্যা করে রানু মণ্ডল সেই আগের ঠিকানায় ফিরে গিয়েছেন। ভাইরাল হওয়ার পরবর্তী সময় ছিল রানু মণ্ডলের কাছে অনেকটাই স্বপ্নের মতো। রানাঘাটের স্টেশন থেকে সোজা জায়গা পেয়েছিলেন বলিউডে। এক গানেই পরিচিতি পেয়েছিলেন সবার কাছে। তবে বেশিদিন সেই খ্যাতি ধরে রাখতে পারেননি।
রানু মণ্ডলের গানের গলা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন সারা দুনিয়ার বাংলা ও হিন্দিভাষাভাষী মানুষেরা। হিমেশ নিয়ে যান রানু মণ্ডলকে। বিভিন্নজন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সহায়তাও করেছেন রানু মণ্ডলকে। তাহলে এত টাকা কোথায় গেল?
সাক্ষাৎকারে রানু বলেন, ‘হিমেশ আমাকে বলেছিলেন আমার জন্য একটা ফ্ল্যাট কিনে রাখবেন। কারণ, মুম্বাইয়ে রেকর্ডিং করতে গেলে দু-তিন দিন থাকতে হয়। আবার রানাঘাটে আসতে হয়। এই ঘন ঘন আসা-যাওয়াটা সম্ভব নয় বলেই হিমেশ আমাকে ফ্ল্যাট দেবেন বলেছিলেন। ওখানে থেকে কাজ করার জন্য শুধু বাড়ি নয়, গাড়িও দেবেন বলে কথা দিয়েছেন হিমেশ!
হিমেশ কি কথা রাখেনি? এ বিষয়ে রানু মণ্ডল বলেন, ‘আমাকে তো টাকা-পয়সা সবই দিয়েছে। আমি টাকা-পয়সার হিসাব জানি না। আমার ব্যাংকের হিসাব দেখে তপন।’
তপন কে? এই বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশি তরুণ মাহসান। মাহসান কলকাতা থেকে রবিবার রানাঘাট গিয়েছিলেন এই ভারাইল কন্যার সঙ্গে দেখা করতে। মাহসানকে রানু মণ্ডল জনান, তপন তার বন্ধুর মতো। সে-ই ব্যাংকের টাকা-পয়সা আছে কি না জানে। তিনি বলেন, ‘আমার সব কিছু দেখভাল করেছে তপন। তাই শুরু থেকেই সব কিছু তপনের কাছেই রয়েছে।’
মাহসান স্থানীয়ভাবে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, তপন রানু মণ্ডলের কাছে কাউকেই ভিড়তে দিত না। যারাই রানু মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আসত, তারা তপনের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তপন যাদেরকে সুযোগ দিত, তারাই রানু মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করতে পারত। এলাকাবাসী জানায়, রানু মণ্ডলের নিজের মেয়েও তপনের কারণে রানাঘাটের ওই বাসায় এসে থাকতে পারেনি।
মাহসান বলেন, ‘আমি যত দূর অনুমান করি, রানু মণ্ডলের এই পরিণতির নেপথ্যে রয়েছেন ঐ তপন, যিনি স্থানীয় শয়তান ক্লাবের মেম্বার। তিনি রানু মণ্ডলের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য রানু মণ্ডল তাকে ম্যানেজার বলেন না, বলেন বন্ধু। সে প্রথম প্রথম বিভিন্ন গানের জন্য বড় অঙ্কের পারিশ্রমিক দাবি করে বসত, যেটা আসলে সম্ভব ছিল না প্রযোজকের পক্ষে। কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে গাইতে নিয়ে যেতে চাইলে তপনের সঙ্গে দামাদামি করতে শুরু করত। যার ফলে একসময় রাণু মণ্ডলকে নিয়ে কাজ করতে চাইলেও তারা বিমুখ হতে শুরু করে।
মাহসান রানাঘাট থেকে কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি এবার এসেছি। এবার রানু মণ্ডলের পড়তি অবস্থা, তাই সেই তপনও এখন কাছে ঘেঁষে না। মাঝেমধ্যে বাজার করে দিয়ে যায়। আর রানু মণ্ডলের অহংকারের যে কাহিনি তৈরি হয়েছিল, এসবের নেপথ্যেও ছিল তপনের শিখিয়ে দেওয়া।
তবু রানু মণ্ডল এভাবেই ঠিক আছেন, এভাবেই বাকি জীবনটা ঈশ্বরের নাম জপে পার করে দিতে চান। জানালেন তরুণকে।