এক নজরে পারভেজ মোশাররফের উত্থান-পতন
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫৯:০২,অপরাহ্ন ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৪৪১ বার পঠিত
তৃতীয় বাঙলা ডেস্কঃ
পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন।
পশ্চিমা দুনিয়ার জঙ্গি দমনের লড়াইয়ে সামনের কাতারে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন তিনি। তবে ২০০৮ সালে অভিশংসন এড়াতে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান, তারপর নির্বাচনে ভরাডুবি।
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মঙ্গলবার তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি বিশেষ আদালত।
২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর অবৈধভাবে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে এই সাজা দেয়া হয়েছে।
পেশোয়ার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াকার আহমাদ শেঠ নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের বিশেষ আদালত মঙ্গলবার ছয় বছর ধরে ঝুলে থাকা এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম বেসামরিক আদালতে দেশদ্রোহের অভিযোগে কোনো সাবেক সেনাপ্রধানের বিচারের রায় এসেছে।
সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পর ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পারভেজ মোশাররফ এখন আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিল্লিতে ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট জন্ম পাকিস্তানের সাবেক এই একনায়কের। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তার পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়।
সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার পর ১৯৯৮ সালে তিনি বাহিনীর প্রধান হন। তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরিফ। সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার প্রায় এক বছর পর তিনি নওয়াজ শরিফকেই ক্ষমতাচ্যুত করেন।
জেনারেল মোশাররফকে সেনাবাহিনীর প্রধান করা ছিল পিএমএল-নওয়াজের এই নেতার জন্য একটি বাজি। কারণ তিনি জ্যেষ্ঠ জেনারেলদের পাশ কাটিয়ে তাকে সেনাপ্রধান করেছিলেন।
১৯৯৯ সালে কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। ওই ব্যর্থতার দায় একা নিতে চায়নি সেনাবাহিনী।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মোশাররফকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন নওয়াজ। কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। নওয়াজ সরকারের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন জানান জেনারেল মোশাররফ।
পাকিস্তানে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যে চাপ ছিল এবং দেশের ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যে মতাদর্শ ছিল, তার মধ্যে ভারসাম্যের চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো এবং আফগান সরকারের অভিযোগ ছিল, আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় আল–কায়েদা ও তালেবানের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি মোশাররফ।
২০০১ সালে যখন জানা যায়, আল-কায়েদার তৎকালীন নেতা ওসামা বিন লাদেন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানে বসবাস করছেন এবং তার অবস্থান সেনা একাডেমি থেকে খুব বেশি দূরে নয়, তখন মোশাররফের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
যদিও তিনি দাবি করেছিলেন, ওসামা বিন লাদেনের অবস্থান সম্পর্কে তিনি জানতেন না।
জেনারেল মোশাররফ পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকতে বিচার বিভাগের সঙ্গে একধরনের লড়াইয়ে নেমেছিলেন। তিনি দেশের আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট পদে আসীন থাকতে চেয়েছিলেন।
এ জন্য তিনি প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মুহাম্মদ চৌধুরীকে বরখাস্ত করেন। এতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর নওয়াজ নির্বাসন থেকে দেশে ফেরেন।
তার ফেরে আসার মধ্য দিয়ে মোশাররফ জামানার অবসানের শুরু হয়। যদিও মোশাররফ জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে হেরে যায় তার দল। এই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ছয় মাস পর অভিশংসন এড়াতে পদত্যাগ করেন তিনি।