নয়ন খিয়াং-এর “জীবনের ছাপ”
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪৫:৩৪,অপরাহ্ন ৩১ আগস্ট ২০২৪ | সংবাদটি ৬ বার পঠিত
আবু জুবায়ের
“ইমপ্রেশন দ্য ভি” বা বাংলায় “জীবনের ছাপ” বইটি একটি ভিন্ন ধরনের সাহিত্যকর্ম, যেখানে লেখক নয়ন খিয়াং তার গভীর জীবনদর্শন ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণ ঘটিয়ে ব্যক্তি অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিক উন্মোচন করেছেন। বইটি প্রথমে একটি সাধারণ বাণীসংগ্রহ মনে হতে পারে, তবে এর প্রতিটি উক্তির মধ্যে নিহিত দর্শন এবং জীবনের প্রতি লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকদের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে।
বইটির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর ভাষার সরলতা। নয়ন খিয়াং অত্যন্ত সাবলীল ও সহজ ভাষায় জীবনের গভীরতম ভাবনাগুলো প্রকাশ করেছেন। তার প্রতিটি উক্তি যেন জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের সামনে একটি নতুন আলোর পথ খুলে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, “দেহের সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী পথিক, কিন্তু হৃদয়ের সৌন্দর্য হলো বন্ধু, যা থাকবে সব সময়”—এই উক্তিটি জীবনের প্রতিকূলতায় আশার আলো জ্বালানোর এক মন্ত্র মনে হতে পারে।
নয়নের লেখনীতে তার প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতার ছাপ স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। “যখন বুঝতে পারার সময় তখন মানুষ বুঝতে পারে না, কিন্তু সময় পার হয়ে যাবার পর বুঝতে পারে”—এই ধরনের উক্তি আমাদের বর্তমান মুহূর্তগুলোর মূল্য উপলব্ধি করতে শেখায় এবং জীবনের প্রতিটি দিনকে নতুনভাবে দেখার আহ্বান জানায়। প্রতিটি বাক্যই পাঠকদের জীবনের গভীরতা ও সৌন্দর্য বুঝতে সাহায্য করে।
বইটির আরেকটি চমৎকার দিক হলো, নয়ন খিয়াং জীবনের সাধারণ ঘটনা ও অনুভূতিগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়। “ইমপ্রেশন দ্য ভি” কেবল একটি সুপাঠ্য বই নয়, এটি জীবনের দার্শনিক অনুভূতি প্রকাশ করে।
নয়নের লেখাগুলো শুধু সহজ কিংবা সংক্ষিপ্তই নয়, এগুলোতে রয়েছে গভীর ভাবনা যা পাঠকদের মনে স্থায়ী ছাপ রাখতে পারে। তার প্রতিটি উক্তি যেন অন্ধকারে আলো ছড়ায়, জীবনের জটিলতার সমাধান দেয় এবং নতুনভাবে জীবন উপলব্ধির এক বিরল সুযোগ তৈরি করে। লেখক তার প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতার সমন্বয় করে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সাহায্য করেন।
আমি আগেই বলেছি, নয়ন খিয়াং-এর “ইমপ্রেশন দ্য ভি” একটি ভিন্ন ধারার সাহিত্যকর্ম। বইটি শুধু পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করবে না, বরং পাঠককে জীবনের গভীরতা এবং অন্তরের সৌন্দর্য নতুনভাবে উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে। এটি জীবনের পথে চলার সময় দিকনির্দেশনা এবং গভীর দর্শন সৃষ্টি করতে প্রেরণা জোগাবে। নিঃসন্দেহে, এই বইটি পাঠকদের মনে একটি স্থায়ী ছাপ ফেলবে এবং পাঠকপ্রিয় হবে
নয়ন খিয়াং একজন অভিজ্ঞ অনুবাদক এবং ফ্রান্সের বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি Solidarités Asie France-এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি, যা ফ্রান্সে অভিবাসীদের সমাজে অন্তর্ভুক্তি এবং তাদের সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে। তার বহুমুখী ভূমিকা ও অভিজ্ঞতা তার লেখায় গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এই সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতা তার লেখায় অবশ্যই প্রভাব বিস্তার করেছে যা “জীবনের ছাপ” বইটি পাঠকদের কাছে আরও প্রাসঙ্গিক এবং অর্থবহ করে তুলেছে।
লেখক : কবি ও গবেষক, প্যারিস-ফ্রান্স।