ডিএপির নিবন্ধনের সময় শুরু হবে চলতি বছরের ১ অক্টোবর থেকে। নিবন্ধন চলবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর ফলাফল দেওয়া হবে ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল। এরপর ডিএপিতে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে ২০২৫ সালের ৩১ মে’র আগে।
শিল্প, নকশা, ফ্যাশন, সংগীত ও স্থাপত্যের মতো বিষয়গুলোতে অধ্যয়নের জন্য আবেদন করতে হয় ক্যাম্পাস আর্ট (www.campusart.org) প্ল্যাটফর্মে। এখানে আবেদনের সময় চলতি বছরের ১ অক্টোবর শুরু হয়ে শেষ হবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি।
সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার চার থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হলে এ সময় আবেদনকারী প্রার্থীকে একটি অফার লেটার দেওয়া হয়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নথি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের ফলাফলের কথা জানিয়ে দেয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘রোলিং ভর্তি’। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কয়েক মাস অপেক্ষা করে সব প্রার্থীর ফলাফল একসঙ্গে জানায়।
আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কোর্স ও পদ্ধতি নির্বিশেষে আবেদনের সময় সাধারণত যে কাগজপত্র দিতে হয়, তা হলো
* সম্পূর্ণ আবেদনপত্র
* ক্যাম্পাস ফ্রান্স থেকে একটি অনুমোদন
* পাসপোর্টের কপি
* আইডি ফটো বা ড্রাইভার লাইসেন্স
* পাসপোর্ট সাইজের ছবি
* একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রশংসাপত্র
* মেডিকেল ক্লিয়ারেন্স
* ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার দক্ষতা সনদ
* ফ্রান্সে প্রার্থীর থাকার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থানের প্রমাণ (প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ৬১৫ ইউরো বা ৭৮ হাজার ৪৪৩ টাকা)
* টিউশন ও বাসস্থান ফি প্রদানের প্রমাণ
*স্পনসর করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একটি স্বীকারোক্তি পত্র
*স্কলারশিপ থাকলে বা কোনো ফরাসি শিক্ষামূলক প্রোগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার কারণে অর্থ ছাড় পেলে তার প্রমাণ
মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য আলাদাভাবে প্রয়োজন হবে—
* রেফারেন্স লেটার
* স্টেটমেন্ট অব পারপাস
* পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ
* সিভি ও কভার লেটার।
*স্কলারশিপের সুবিধা—
প্রতিবছর ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের বিপুলসংখ্যক বৃত্তি দিয়ে থাকে। তা ছাড়া ফরাসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় সব কোর্সে টিউশন ফি’র জন্য বৃত্তি বা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ ছাড় দিয়ে থাকে। অবশ্য সব বৃত্তি প্রধানত মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক ছাত্র–ছাত্রীদের সবচেয়ে সাধারণ বৃত্তিগুলো হলো ইরাসমুস মুন্ডাস স্কলারশিপ, আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি ডি লিয়ন মাস্টার্স স্কলারশিপ এবং ইউনিভার্সিটি প্যারিস-স্যাক্লে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স স্কলারশিপ।
স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন—
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন। এ সময় যে কাগজপত্র দরকার, তা হলো
* সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা ভিসা আবেদন
* পাসপোর্ট কপি
* সাদা পটভূমিতে তোলা ২ বাই ২ ইঞ্চি সাইজের ছবি
* পূর্ববর্তী সব একাডেমিক সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও মার্কশিট
* ফরাসি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার। এখানে অধ্যয়নের প্রোগ্রাম, অধ্যয়নের শুরু ও শেষ তারিখ উল্লেখপূর্বক বিশদ বিবরণ থাকবে।
* ফ্রান্সে থাকার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থানের প্রমাণ। ফ্রান্সের বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এই ব্যয় প্রতি মাসে ৬১৫ ইউরো বা ৭৮ হাজার ৪৪৩ টাকার সমতূল্য। এটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট, গ্যারান্টরের চিঠি, বৃত্তি বা অনুদান থেকে অর্থায়নের স্বীকৃতির একটি প্রশংসাপত্রের সঙ্গে দেখাতে হবে।
* চিকিৎসা বিমার প্রমাণ (সর্বনিম্ন ৩০ হাজার ইউরো)
* বাসস্থানের প্রমাণ। এটি হতে পারে স্টুডেন্ট হাউজিং কনফারমেশন, বোর্ড ও লজিংয়ের সার্টিফিকেট অথবা বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে থাকলে তার একটি প্রত্যয়নপত্র
* ভাষা দক্ষতার সনদ (ফরাসি কোর্স হলে ফরাসি ভাষার সনদ, অন্যথায় টুয়োফল বা আইইএলটিএসের নথিপত্র)
* এখানে পাসপোর্ট ও ছবি ছাড়া প্রতিটি নথির সঙ্গে মূল কপি দিতে হবে।
ফ্রান্সে জীবনযাত্রার জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা—
ফ্রান্সে প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির অনুমতি আছে। দেশটির চাকরির বাজারে খণ্ডকালীন কর্মীদের অধিক চাহিদার কারণে চাকরির জন্য তেমন বেগ পেতে হয় না। সপ্তাহে কাজের সময় বেশ সীমিত হলেও তা থেকে মাসে যে আয় আসে, তা থাকা-খাওয়া ও চলাফেরার জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়া সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনগুলোতে কর্মঘণ্টার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এ সময়গুলোতে কাজ করা হলে ফ্রান্সের জীবনযাত্রা বেশ সহজ হয়ে ওঠে। এই কাজগুলো শুধু আর্থিকভাবে উপকৃত করবে না, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন এবং নেটওয়ার্ক তৈরিতেও সাহায্য করবে।
পড়াশোনা শেষে চাকরি ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ—
ডিগ্রি অর্জনের পর অল্প সময়ের মধ্যে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাওয়া যায়। এর জন্য স্নাতকসম্পন্নকারী প্রার্থীদের অবশ্যই ফ্রান্সে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানিতে চাকরি নিতে হবে। অতঃপর সেই চাকরিতে বহাল থাকতে হবে প্রায় সাড়ে তিন বছর। এখানে মনে রাখা জরুরি, স্থায়ী বসবাসের সুবিধা অর্জনের জন্য অবশ্যই প্রতি মাসে আয়কর দিতে হবে। কেননা, সেই সাড়ে তিন বছর সময় গণনা করা হয় এই আয়কর দেওয়ার ভিত্তিতে। ফ্রান্সে স্থায়ী হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে ইইউয়ের ২৬টি দেশে অবাধে চলাফেরা করা যায়।
সৌজন্যে – প্রথম আলো