বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় করণীয়
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪৫:২৪,অপরাহ্ন ১২ অক্টোবর ২০১৯ | সংবাদটি ৯৭১ বার পঠিত
তৌহিদা খানম
প্রতিদিন আমি ফেসবুকে কিছু মেসেজ এবং কল পাই। এর একটা বিশাল অংশ জানতে চায়, কিভাবে বিদেশে পড়তে যাওয়া যেতে পারে এবং কোন এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করা যেতে পারে, এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মকে কত টাকা দিতে হতে পারে, টোটাল কত খরচ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। জানতে চাওয়া মোটেই দোষের কিছু না। তাছাড়া আমি যেহেতু বিদেশে থাকি এবং বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তাই জানতে চাইতেই পারে। তবে বলতেই হচ্ছে, আপনার যদি বিদেশে পড়াশোনা করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করানো বা কারো কাছ থেকে জানতে চাওয়াটা স্রেফ বোকামি! এর কারণ হচ্ছে আপনি যেই প্রশ্নগুলো করছেন, এর উত্তর ইন্টারনেট ঘেঁটেই বের করা যায়। এখনতো ইন্টারনেট সবার হাতে হাতে! আপনাকে প্রতিদিন বেশ কিছু সময় ইন্টারনেট ঘাঁটতে হবে। ইন্টারনেটে আপনি কি তথ্য জানতে চাইবেন? শুরু করবেন গুগল সার্চ দিয়ে। ধরুণ, আপনি আমেরিকায় পড়তে যেতে চাইছেন কিংবা ইংল্যান্ড, সুইডেন বা জার্মানি।
এখন আপনার কাজ হচ্ছে গুগলে সার্চ দিয়ে এইসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। জগতের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তাদের ভর্তির তথ্য দেয়া থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনলাইনেই আবেদন করা যায়।
এখন আপনি যেই তথ্যগুলো নেবেন, সেটা হচ্ছে- ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে কিংবা স্কলারশিপ পেতে কি কি যোগ্যতা লাগে। দেখবেন বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা একটা সেকশন থাকবে, যেখানে লেখা থাকবে- ইংলিশ রিকয়ারমেন্ট। অর্থাৎ আপনাকে ইংলিশ টেস্টে স্কোর কত পেতে হবে। এছাড়া আপনার সিজিপিএ কত থাকা উচিত ইত্যাদি।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো দেখবেন অনেক বেশি ইংলিশ টেস্ট স্কোর চাইছে, অনেক জায়গায় হয়তো আপনার যেই যোগ্যতা তাতেই হয়ে যাবে, আবার এমন বিশ্ববিদ্যালয়ও পাওয়া যেতে পারে, যেখানে হয়তো টেস্ট না দিলেও চলছে! এই তথ্যগুলো জানার জন্য আপনাকে যেটা করতে হবে- প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘাঁটতে হবে। এভাবে ওয়েবসাইট ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা সময় আপনি পেয়ে যাবেন আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী আসলে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন।আর এসব তথ্য বের করতে যদি আপনার কষ্ট লাগে আর সেক্ষত্রে আপনি কোন এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মের সহায়তা নিতে পারেন।
বিদেশে পড়তে আসা খুব সহজ যদি থাকে ইচ্ছেশক্তি
যদি মনস্থির করেন আপনি বিদেশে পড়াশোনা করবেন। যাদের বিদেশে পড়াশোনার বিষয়ে তথ্য জানার আছে, তারা এই লেখাটা পড়তে পারেন বা সংগ্রহে রাখতে পারেন।
বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি
১.প্রথমে আপনি একটি পাসপোর্ট করে নিন। পাসপোর্টে যাতে কোন সমস্যা না থাকে যেমন সার্টিফিকেটের সাথে নাম জন্মতারিখ যেন মিল থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২.কেবল একাডেমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল নয়। ইংরেজীতেও দক্ষতা থাকতে হবে IELTS এ ভালো স্কোর নূন্যতম ৬-৭ স্কোর থাকতে হবে। না থাকলে বিদেশে পড়াশোনার চেষ্টা করে লাভ নেই। বিশেষত স্কলারশিপ যে মিলবে না এটা নিশ্চিত। তবে চীন, জাপান, জার্মানী, ফ্রান্স এসব দেশে যেতে চাইলে ঐ দেশের ভাষাটাও শিখে নেয়া ভালো।
তাই IELTS এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।এক্ষেত্রে আপনি ইউটিউবের ভিডিও দেখে কিংবা ব্রিটিশ কাউন্সিল,এক্সিকিউটিভ কেয়ার বা অন্য কোন কোচিং সেন্টারের সহায়তা নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। ভালো প্রস্তুতি থাকলে IELTS পরীক্ষাটা দিয়ে ফেলুন। IELTS পরীক্ষা দেবার জন্য আপনার পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে তাই প্রথমে পাসপোর্ট করে রাখার কথা বলেছিলাম।
৩. সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ইংরেজীতে করিয়ে নিতে হবে।এক্ষেত্রে দুই ভাবে অনুবাদ করা যায়। বোর্ডের একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে জমা দিয়ে শিক্ষা বোর্ড থেকে সনদপত্র ও নাম্বারপত্রের অনুবাদ কপি তোলা যায়। তবে এক্ষেত্রে একটু সময় বেশি লাগে বলে আপনি ইচ্ছে করলে নোটারি পাবলিক থেকেও অনুবাদ করাতে পারেন।
৪.ছবি এবং সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট অবশ্যই বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রানালয়ের একটি বিশেষ শাখা থেকে সকল কাগজ পত্রের মূলকপি দেখানো সাপেক্ষে বিনামূল্যে সত্যায়িত করা নিতে হবে। এছাড়া নোটারি পাবলিক থেকেও সত্যায়িত করা যায়।
৫.আপনার কোন স্টাডে গ্যাপ থাকলে সেটা কেন বা ঐসময় চাকরি করলে তার প্রমাণপত্রাদি সংগ্রহে রাখতে হবে।ক্ষেত্র বিশেষে এসব লাগতে পারে।
৬.স্কলারশিপের জন্য একটা মোটিভেশন লেটার লিখুন আপনি কেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়তে যেতে আগ্রহী আপনার পরিকল্পনা এবং আপনাকে কেন স্কলারশিপ দেওয়া যেতে পারে এগুলো সুন্দর এবং যৌক্তিকভাবে মোটিভেশন লেটারে লিখুন।নিজে না পারলে অভিজ্ঞ কারো সহায়তা নিতে পারেন।তবে কোন ভাবে ইন্টারনেট থেকে সার্চ করে কপি করে দিয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা।
৭.ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট অথাৎ আর্থিক সামর্থের প্রমানপত্র লাগবে। বিদেশে পড়াশোনাকালীন যাবতীয় খরচ বহন করতে পারবেন এজন্য বিভিন্ন অংকের অর্থের ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট লাগে।প্রমানস্বরূপ ব্যাংক গ্যারান্টিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি লাগবে।
কারণ যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি ভর্তি হতে চাচ্ছেন তার খরচ বহন করা আপনার পক্ষে সম্ভব কিনা সেটা কর্তৃপক্ষ দেখবে।যদি মনে করে ব্যয়ভার বহন করা শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়, তাহলে ভিসা মিলবে না।
৮.বিদেশ ভ্রমণের জন্য আপনাকে ট্রাভেল ইন্সুরেন্স করতে হবে।
উপরের সবগুলো নিয়ে যদি আপনি প্রস্তুত। তাহলে
আবেদন এবং ভর্তি প্রসেসিং শুরু করে দিন।বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে যখন দেখবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে যোগ্যতাগুলো দরকার সেগুলোর সঙ্গে আপনার যোগ্যতা মিলে যাচ্ছে, তখন আপনিন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করবেন। সেখানে দেয়া আছে আবেদন করার শেষ সময় কত তারিখ কিংবা ঠিক কবে থেকে আবেদন করা যাবে। অনলাইনে আবেদন করে ফেলবেন, সেই সঙ্গে আপনার সব সার্টিফিকেটগুলো এবং অন্যান্য যেসব কাগজপত্রাদি চায় সেগুলো সব স্ক্যানিং করে আপলোড করে দেবেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো আপনাকে বলবে- কাগজগুলোর কপি পাঠাতে, সেই ক্ষেত্রে বাই-পোস্টে পাঠিয়ে দেবেন।নির্দিষ্ট দেশের বাছাইকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রথমে ভর্তি তথ্য, প্রসপেকটাস ও ভর্তি ফরম চেয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সময় নির্দিষ্ট দেশও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভেদে একটা আবেদন ফি পরিশোধ করতে হয়।তবে আমার জানা মতে এটা ১০০০০ টাকার মধ্যে।
আবেদন করার পর মাস খানেক বা মাস দুয়েক পরে ওরা আপনাকে ইমেইল করে জানাবে, আপনি এডমিশন পেয়েছেন কিনা। এডমিশন যদি পান, তাহলে ওরা এডমিশন লেটার পাঠিয়ে দেবে। ভর্তির অনুমতিপত্র বা অফার লেটার পাওয়ার পর সাধারনত অফার লেটারে বা প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত টিউশন ফি’র সমপরিমান অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে।সেই সঙ্গে আপনাকে বলবে ভিসার আবেদন করতে।
ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও প্রায় সব নিয়মই এক রকম। ভিসার আবেদন করা মোটেই ঝামেলার কিছু না। যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি চান্স পেয়েছেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই দেখবেন আলাদা করে একটা লিঙ্ক দেয়া আছে, সেই দেশের মাইগ্রেসন বোর্ডের। তো সেখান থেকে আপনি জেনে নিতে পারবেন কিভাবে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।ধরুণ, আপনি ইউরোপের কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডমিশন পেয়েছেন। এখন আপনাকে ভিসা কিংবা রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ভিসার আবেদনপত্র সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া আপনি বাংলাদেশে ঐ দেশের অ্যাম্বাসিতেও যোগাযোগ করতে পারেন। ওরা বসেই আছে-আপনাকে তথ্য দেয়ার জন্য। । অ্যাম্বাসি মানেই ভয়ের কিছু না! এরা বসেই আছে আপনাকে তথ্য দেয়ার জন্য কিংবা ভিসা দেয়ার জন্য। আপনাকে স্রেফ নিয়ম মেনে এগুতে হবে। নির্দিষ্ট দূতাবাস থেকে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সঠিক তথ্য দিয়ে নির্ভুল ভাবে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ দূতাবাসে জমা দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট দিনে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে।
নতুন একটি ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষ হয় দেশান্তরিত।বিদেশে পড়ার স্বপ্নসারথীদের জন্য অগ্রিম
শুভকামনা ও ভালবাসা।
লেখক ;তৌহিদা খানম
পিএইচডি অধ্যয়নরত
সর্বন বিশ্ববিদ্যালয় ,ফ্রান্স।