আমস্টারডামের রেডলাইটে একরাত
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫১:২৫,অপরাহ্ন ২৮ মে ২০২০ | সংবাদটি ৬৯৯ বার পঠিত
মাসুদুল হাসান রনি
টিউলিপের দেশ নেদারল্যান্ডে আমার দ্বিতীয়বার ভ্রমন ছিল খুবই আকস্মিক। দুইহাজার দশ সাল থেকে গুনে গুনে পাক্কা তিনবছর পর আমাস্টারডাম যাওয়া হয়। এটা ছিল আমার বন্ধু প্রবালের জন্য সারপ্রাইজড ভিজিট।
তেরো সালের মে মাসে আমি গিয়েছিলাম বেলজিয়াম। সেখান হতে বাই রোডে জার্মানীর ডুসেলড্রফ যাবার পথে কোন প্ল্যান ছাড়াই হঠাৎ আমাস্টাডাম নেমে পড়ি।
ডুইভান্ড্রেকে ইউরোলাইন বাস কাঊন্টারে নেমে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাই সেন্ট্রাল ট্রাম স্টেশনের পাশে বাল্যবন্ধু প্রবালের রেস্টুরেন্ট কর্নফুলিতে।
হঠাৎ আমার আগমনে প্রবাল ও তার স্ত্রী লীনা বিস্মিত। ওরা আমাকে দেখে বিশ্বাস করতে পারছিল না আমি শেষ পর্যন্ত আমাস্টারডাম এসেছি! এই বিশ্বাস না করার অবশ্য একটা কারন আছে। আমি বহুবার বলেছি, এবার প্যারিস এলে তোদের এখানে ক’দিন থেকে যাব। কিন্তু আমার আর যাওয়া হয়ে উঠেনি। এন্টারপ্রেন থেকে যখন বাস ছাড়ে তখনই মাথায় ভুত চেপে বসে। এ যাত্রায় আমাস্টারডাম যাবোই।
- শুধু প্রবাল, লীনা নয় আমাকে আমাস্টাডাম টেনেছিল দু’টো কারনে। প্রথমতঃ জগদ্বিখ্যাত টিউলিপের বাগান দেখা। দ্বিতীয়ত পর্যটকদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু রেডলাইট এরিয়া বা যৌনপল্লী দেখতে যাওয়া। এর বাহিরে আরো একটি বড় কারন ছিল প্রিয় ফুটবলার মার্কো ভন বাস্তেনের দেশে দ্বিতীয়বার পদধুলি দেয়ার ইচ্ছে।
প্রবালের রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে লীনার সাথে আমি বাসায় চলে আসি। মাত্র পাঁচ মিনিটের ওয়াকিং ডিস্টেন্সে প্রবালের বাসা। রাত দশটায় প্রবাল আমাকে নিয়ে বের হবে রাতের আমাস্টারডাম দেখাতে। তাই ফ্রেশ হয়ে অবেলায় একটু ঘুমিয়ে নেই। যাকে বলে ভাত ঘুম দেই।
আমস্টারডাম হচ্ছে দুনিয়ার ভ্রমণপ্রিয় ও ফুর্তিবাজদের জন্য এক আকর্ষনীয় শহর। প্রত্যেক বছর এক মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক আসেন এই শহরে। এই শহর দিনে যতোটা সরগরম থাকে তেমনি রাতেরবেলাও পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে। ভ্যানগগ মিউজিয়াম, স্কোয়ার ড্যাম, রেড লাইট ডিস্ট্রিক্ট হচ্ছে পর্যটকদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু।
প্রবাল বাসায় ফেরার আগে লীনার চায়ের আমন্ত্রনে আমার ঘুম ভাঙ্গে। রাত তখন সাড়ে ন’টা। ওদের টোনাটুনির সংসার অালোকিত করে এখনো কেউ আসেনি। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় দু’জন ভালোবেসে বিয়ে করেছে। হিন্দু মুসলিম বিয়ে নিয়ে দু’পরিবারে বেশ হাংগামা হয়েছিল। সেই সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে দু’জনে পালিয়ে চলে এসেছিল আমার নারায়ণগঞ্জের বাসায়। দুই পরিবারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রায় দশ বারোদিন ওরা আমার বাসায় ছিল। এরপর ঢাকার শাহজাহানপুরে বাগিচায় দুইরুমের ছোট একটা বাসায় সংসার শুরু করেছিল। বছর না ঘুরতে লীনা আমাস্টারডামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে কি একটা বিষয়ের ওপর পিএইচডি করতে চলে আসে। পরে স্পাউস ভিসায় প্রবাল এসে নানান রকম অড জব টব করে কিছুটা আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখে। দুইহাজার বারো সালে জব ছেড়ে স্বামী স্ত্রী দু’জন মিলে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নেমে পড়ে। তাদের হাড়ভাংগা পরিশ্রম, পার্মানেন্ট রেসিডেন্টের জন্য অপেক্ষা, অনিশ্চিত জীবনকে একটু গুছিয়ে নেয়ার চেস্টা – এসবের খবর দেশে বসে নিয়মিত পেতাম। এবার এসে মনে হলো ওরা আগের চেয়ে অনেকবেশী স্থিতিশীল ও নিশ্চিন্ত জীবন পেয়েছে।
চা খেতে খেতে লীনার সাথে রাজ্যের গল্প। আমি কেন বিয়ে করছি না, কেন বাহিরে সেটেল্ড হচ্ছি না এরকম অসংখ্য অভিযোগ লীনার। বাই দ্যা ওয়ে বলে রাখা ভাল লীনাও কিন্তু আমার পরিচিত তাদের বিয়ের আগে থেকে। সমবয়সী বলে আমাদের বন্ধুত্বটা জমতে দিন দশেকের বেশী সময় লাগেনি। তুমি থেকে তুই আমাদের সম্পর্ক।
প্রবাল বাসায় এলো রাত দশটায়। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে বসে কিছু একটা খেয়ে বলল,চল রাতের আমাস্টারডাম ঘুরে দেখাই। আমি তো ঘোরার জন্য এক পায়ে দাঁড়ানো।লীনাও আমাদের সাথে যাবে শুনে মনের ভেতর খচখচানি। ওকে নিয়ে রেডলাইট ডিস্ট্রিক দেখতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?
মেয়েরা একটু বেশী কনসাস। আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরে লীনা পরিবেশটা হাল্কা করে দেয়।
– দোস্ত, তুই কি জানিস, এখানে পর্যটকরা এসে টিউলিপ বাগান দেখার আগে দৌড়ায় রেডলাইট এরিয়া দেখতে। তুই বা কেন বাদ যাবি। আমারও দেখার ইচ্ছে। আজ রাতে আমরা ওইটা দেখব।
আমি কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলি, আমার দেখতে আপত্তি নেই। গতবার এসে এটা না দেখে ফিরেছিলাম। তখন অনেকেই বলেছে গ্রেট মিসড।
– হুম সত্যি বলেছে। আমাস্টারডামের রেডলাইট ডিস্ট্রিকে বিশ্বের সেরা সুন্দরী দেহ ব্যবসায়ীদের দেখা পাওয়া যায়। সুন্দরী দেখে পটে গেলেই কিন্তু বিপদ। দাম দস্তর ঠিকমতন না হলে খদ্দরদের সাথে চরম ঝগড়াঝাটি নিয়মিত ঘটনা। অনেক ট্যুরিস্ট সুন্দরীর প্রলোভনে পড়ে ইউরো খুইয়ে সর্বশান্ত হয়ে ভোরবেলা হোটেলে ফিরে। এখানে প্রস্টিটিউশন লিগ্যাল এন্ড গর্ভমেন্ট কন্ট্রোল্ড। সো , দেয়ার ইজ এভরিবডি সেইফ।
লীনার কথা শেষ হতে প্রবাল যোগ করে, প্রসটিটিউশনের পাশাপাশি এবরোশন এন্ড পেইনলেস স্বেচ্ছায়মৃত্যু লিগ্যাল। ২০০১ সালে বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে ওরা সমকামীদের বিয়ের লিগ্যালেটি দেয়।
রাত এগারোটায় আমরা ঘুরতে বের হই। প্রথমবার এই শহর খুব একটা দেখা হয়নি। আলো ঝলমলে রাতের আমাস্টারডাম মাত্রই জেগে উঠেছে৷ রাস্তায় রাস্তায় প্রচুর ট্যুরিস্ট। পথে খুব একটা গাড়ি চোখে পড়ে না।শুধুই সাইকেল আর সাইকেল। আমরা হাঁটতে হাঁটতে সেন্ট্রাল ট্রাম স্টেশনের পাশে এক পাবে ঢুকে পড়ি।হল্যান্ডের বিখ্যাত বাভারিয়া বিয়ারে তিনজনেই গলা ভিজিয়ে নেই।
পাবের ভেতর যতো ছেলে মেয়ে দেখলাম সবাই দীর্ঘাকায়। ছেলে মেয়ে উভয়েরই লালচে ব্রাউন চুল। পুর্বেই জানতাম নেদারল্যান্ডে ছেলেদের গড় উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রায় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। সাধারণত ডাচ মানুষেরা উচ্চতায় পৃথিবীতে সবচাইতে লম্বা হয়ে থাকে।
পাব থেকে বের হয়ে প্রবাল বলল, ১০/১২ মিনিট হেঁটে গেলে ওয়ালেন। সেখানেই আমাস্টারডামের বিখ্যাত রেডলাইট এরিয়া।
মে জুনের এ সময়টাতে আমাস্টারডামে চমৎকার আবাহাওয়া। শীতল করা হাওয়া গায়ে লাগিয়ে হাঁটছি। লীনা বেশ গুনগুনিয়ে গান গাইছে। জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে, বসন্তের এই মাতাল সমীরণে। যাব না গো যাব না যে, রইনু পড়ে ঘরের মাঝে, এই নিরালায় রব অাপন কোনে, যাব না এই মাতাল সমীরণে…
অসম্ভব মিস্টি গলা লীনার। একসময় চাঁদপুর শহরে ওদের বাসায় ওস্তাদজীর কাছে গান শিখেছে। নতুন৷ কুঁড়িতে দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত গিয়েছিল। পরে পড়াশুনোয় মনযোগি হয়ে গানটা ছেড়ে দিয়েছে। আমার বিশ্বাস গাইলে ও ভালই করতো। লীনার কন্ঠে অনেকদিন পর গান শুনছি। তাঁর ভরাট কন্ঠে আরো একটি রবীন্দ্রসংগীত শুনতে শুনতে আমরা ওয়ালেন চলে আসি। বর্নিল আলো আঁধারে রাতের সৌন্দর্য চারিদিকে ঠিকরে পড়ছে। অসংখ্য মানুষ আসছে যাচ্ছে। কালো সাদা ব্রাউন কত রঙের মানুষ। কারো গা ঘেষাঘেষি করে বা চেপে হাঁটতে হয় না।
ওয়ালনের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে প্রবাল বলল, আমরা রাস্তার এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হবো। বিল্ডিংগুলোর দিকে খেয়াল রাখলে বুঝতে পারবি কেন আমাস্টারডামের রেডলাইট এরিয়া বিখ্যাত।
আমরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকি। প্রতিটি বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন ফ্লোরের রাস্তামুখো একটি বিশেষ উইন্ডো রয়েছে। যার মধ্যে যৌনকর্মীরা নিজেদের ডিসপ্লে করে। উপচে পড়ে ট্যুরিস্টরা বা খদ্দেররা কাউকে তাদের পছন্দ হলে দামদস্তুর করে ।
রেডলাইট ডিস্ট্রিকের একপাশে আবাসিক এলাকা অন্যদিকে যৌনপল্লী। এই আকর্ষনে প্রত্যেক বছর এক মিলিয়নের বেশী ট্যুরিস্ট আমাস্টারডাম আসেন। রেডলাইট এরিয়া রাতদিন সব সময় মুখরিত থাকে। কিছুটা হৈচৈ ও কোলাহলময়। এখানে রাত যত বাড়বে ভিড় ততো বাড়বে এবং মানুষের হৈচৈ ততো বাড়বে। আমরা যেমন তিনজন এসেছি তেমনি এখানে বহু ট্যুরিস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে।
প্রবালকে জিগেস করি, তুই কি জানিস যৌনপল্লীকে কেন রেড লাইট এরিয়া বলা হয়? কিংবা রেডলাইটের সঙ্গে দেহব্যবসার কী সম্পর্ক?
প্রবাল মাথা ঝুঁকিয়ে বললো, না রে এ আমার জানা নেই।
লীনা খুব স্মার্টলি মোবাইলে গুগল ঘেটে জানালো, উইকিপিডিয়া লিখেছে, হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে লাল বাতির সঙ্গে যৌনকর্মীদের সম্পর্ক রয়েছে। ‘লাল’ আলোর সঙ্গে যৌনতা সম্পৃক্ত বলে মনে করা হত আমেরিকা এবং ইউরোপের একাংশে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সের বহু যৌনপল্লিতে নীল আলো ব্যবহার করা হত। নীল আলোর অর্থ ছিল, সেই সব যৌনপল্লিতে একমাত্র উচ্চপদাধিকারীদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। লাল আলো যেখানে জ্বালানো হত, সেখানে বাকীদের ছিল প্রবেশাধিকার। চীনের যৌনপল্লিগুলিতে লাল লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাখার রেওয়াজ ছিল। সেই থেকেই লালের সঙ্গে যৌনপল্লির যোগ।
খালের দুপাড়ে পাথর বাঁধানো রাস্তা ধরে আমরা হাঁটতে থাকি।দু’পাশে তিন বা চার শত কিংবা তার চেয়ে বেশি বছরের পুরোনো বাড়িগুলোর নিচতলায় বিশাল একেকটা শো উইন্ডোর সারি। এই উন্ডোগুলোর মধ্যে একজন করে মেয়ে দাঁড়ানো বা বসা। তাদের গায়ে নামমাত্র পোষাক। ব্রা , প্যান্টিছাড়া কিছুই নেই। ঘুম হারাম করে দেয়া অপুর্ব দেহ সৌন্দর্যে ঘায়েল হয় দেশ বিদেশের ট্যুরিস্টরা।
উইন্ডোগুলোর ওপর লাল আলোর ফ্রেম। খদ্দেরদের সাথে দাম দস্তর বনিবনা হলে উন্ডোর লালবাতি জ্বলে উঠে। তার মানে এই সুন্দরী ঘন্টা হিসেবে বা বাকী রাতের জন্য বুকড।
আমাস্টারডাম রেডলাইট ডিস্ট্রিক্টের সীমানা দিন দিন ছাড়িয়েছে অনেকদুর। ১২৭০ সালে এই যৌনপল্লীর যাত্রা শুরু হয়েছিল ডাচ আর বিদেশি নাবিকদের জন্যই। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের ওয়ালনে নিয়ে আসা হতো। কালক্রমে এর নামডাক ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়।
আমরা পপকর্ন খেতে ডি ভ্যালেন চলে আসি। এ স্থানটি রেডলাইট এরিয়ার সবচেয়ে প্রাচীনতম স্থান। ধারনা করা হয় এখানেই আমাস্টারডাম রেডলাইট এরিয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখানকার বিল্ডিংগুলো ওয়ালনের চেয়েও বেশী পুরানো। চার শ থেকে পাঁচশ বছরের। সব বিল্ডিংয়ের নীচে কাঁচের উইন্ডো আছে। লাল লন্ঠন জ্বলছে অনেকগুলোতে। বেশ কিছু উইন্ডোতে দেখি কোন আলো জ্বলেনি। সুন্দরী মেয়েগুলো নানান ভঙ্গিমায় আমাদের দৃস্টি আকর্ষনের চেস্টা করতে থাকে। সেদিকে আমাদের ভ্রুক্ষেপ নেই।
রাত গভীর হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত। ঘুমও পাচ্ছে।
চল বাসায় যাই। কাল না হয় রাতের শহর দেখা যাবে।
লীনা তাড়া দেয়,হ্যা চল চল। আমারও টায়ার্ড লাগছে।
আমরা রাস্তা পেরিয়ে বাড়িমুখো হাঁটা দেই। লীনা গান ধরে। তার সাথে আমরা গলা ছেড়ে তাল মেলাই।
“আলো আমার আলো ওগো, আলো ভূবন ভরা, আলো নয়ন ধোওয়া আমার আলো হৃদয় হরা, নাচে আলো নাচে ও ভাই, আমার প্রাণের কাছে – বাজে আলো বাজে ও ভাই, হৃদয়বীণার মাঝে জাগে আকাশ, ছোটে বাতাস, হাসে সকল ধরা ।
ছবিঃ দ্বিতীয় ছবিটা ইন্টারনেট।
আমার ছবির কারিগর প্রবাল