আসুন দরিদ্র ভাইদের পাশে দাঁড়াই
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২৭:৪৫,অপরাহ্ন ১৯ মে ২০২০ | সংবাদটি ৫২৮ বার পঠিত
মঈন চিশতী
ফা ফিররু ইলাল্লাহ। আল্লাহর দিকে দৌড়ে এসো। আল্লাহর এই বাণীর আলোকে আসুন ভেবে দেখি ২৫তম রমজানে আমরা কতটুকু মুত্তাকি হতে পেরেছি।
এক ভাই বলছিলেন, আমার শোরুম মালিক করোনায় মারা গেছেন। তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি জানাজায় গিয়েছিলেন? জবাবে বললেন, তার পার্টনার ও ভাইয়েরাই যায়নি, লাশ আঞ্জুমান দাফন করেছে।
মনে পড়ে গেল কেয়ামতের দৃশ্য, যা কোরআনে এসেছে এভাবে, ‘সেদিন তারা ভেগে যাবে নিজের ভাই থেকে, মা থেকে, স্ত্রী পুত্র থেকে।’ আজ দুনিয়াতেই আমরা ‘ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি’ শুরু করে দিয়েছি। আমাদের ধর্মীয় সামাজিক রীতি ভেঙে গেছে। করোনার ভয় আমাদের আপনজনদের যেন পর করে না দেয়। আমরা স্বাস্থ্যবিধি (সামাজিক দূরত্ব) মেনে চলব ইনশাআল্লাহ, মনের দূরত্ব নয়।
রমজান আমাদের শিখিয়েছে সহমর্মিতা ও সৌহার্দ। একসঙ্গে বসে ইফতার ও সাহরি এবং সালাতুত তারাবিহ আদায় করা। করোনার কারণে আজ সাময়িক ছন্দপতন হলেও আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি যেন ভুলে না যাই। আমরা যেন আমাদের অন্ন-বস্ত্র থেকে কিছু অংশ নিঃস্ব ছিন্নমূলদের জন্য বরাদ্দ রাখি। সাহাবাদের জীবন থেকে একটি দৃষ্টান্ত দেই। আবু জাহেম বিন হোজাইফা (রা.) বলেন ‘ইয়ারমুক যুদ্ধের পর আমার ভাইয়ের সন্ধানে এক মশক পানি নিয়ে বের হয়ে দেখি তিনি আহত হয়ে পানি পানি করছেন। আমি তার মুখের কাছে মশক মেলে ধরলে পাশ থেকে পানি পানি বলে আরেকজনের আওয়াজ আসে। তিনি পানি পান না করে ওই ব্যক্তিকে পান করাতে বললেন। আমি সেই ব্যক্তির মুখে পানি দিতে যাব- এমন সময় পাশ থেকে পানি পানি বলে আরেকজনের আওয়াজ আসে। তিনি বলেন, আমার চেয়ে তার প্রয়োজন বেশি মনে হয়। তাকে আগে পান করান, আমি পরে খাব। সেখানে গিয়ে দেখি ওই ব্যক্তি শাহাদতের পেয়ালা পান করে নিয়েছেন। এর পর দ্বিতীয় ব্যক্তির কাছে এসে দেখি তিনিও শাহাদতবরণ করছেন। এরপর আমার ভাইয়ের কাছে এসে দেখি তিনিও জান্নাতের পাখি হয়ে উড়ে গেছেন। এগুলো আমরা ইতিহাসে পড়ি বটে, বাস্তবে এমন দৃষ্টান্ত আজ কল্পনাও করতে পারি না।
ইদানীং ইফতারির সময় দোকানে, অফিসে পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হয়, বাড়ির দুয়ার বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ নবীজির (সা.) ইফতারির দস্তরখানা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। আজও মসজিদে নববিতে শাহি ইফতারের আয়োজন হয়। মদিনাবাসী নবীজির (সা.) মেহমানদের ইফতার খাইয়ে তৃপ্তি বোধ করেন। কিন্তু আমরা যেন সাহরি ইফতারকে উদর পূর্তির অসিলা বানিয়ে ফেলেছি। আজ আমাদের মসজিদগুলোয় করোনার প্রাদুর্ভাবে ইফতারের আয়োজন বন্ধ। ছিন্নমূল মানুষ মুসাফির পথিকদের ইফতারের ব্যবস্থা হতো মসজিদগুলোয়। আমাদের উচিত এসব মানুষের জন্য যতটুকু সম্ভব সাহরি ইফতারের ব্যবস্থা করে মুক্তির দশকে নাজাতের সনদ লাভ করা।
আল্লাহ আমাদের নিঃস্ব দরিদ্র ভাইকে দান খয়রাত করে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা লাভ করার তাওফিক দিন। আমিন।
Email : mueenchishty@gmail.com