পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ড বাতিল
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:২৬:৪৭,অপরাহ্ন ১৪ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ২৭৫ বার পঠিত
তৃতীয় বাংলা ডেস্কঃ
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিশেষ আদালতে পাকিস্তানের সাবেক সেনাশাসক পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ড ‘অসাংবিধানিক’ বলে বাতিল করে দিয়েছেন লাহোর হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার এ রায় দেন আদালত। তিন বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এ রায় দেন। খবর দ্য ডন ও বিবিসির।
গত ১৭ ডিসেম্বর মোশাররফের অনুপস্থিতিতে উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন ইসলামাবাদের একটি বিশেষ আদালত। পাকিস্তানের ইতিহাসে বেসামরিক আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সাবেক কোনো সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে সেটিই ছিল প্রথম রায়। এক মাসের কম সময়ের মধ্যে সে রায় গতকাল লাহোর হাইকোর্ট খারিজ করে দেন। আদালত রায়ে বলেছেন, যে বিশেষ আদালত গঠন করে মোশাররফের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তা ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘অবৈধ’। যেভাবে ওই মামলা করা হয়েছে, তা-ও আইনসম্মত হয়নি।
২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর অবৈধভাবে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করেন তৎকালীন সেনাশাসক জেনারেল মোশাররফ। উদ্দেশ্য ছিল, ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানো। এ জন্যই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। পাকিস্তানের সংবিধানের ৬ ধারা অনুযায়ী উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
মৃত্যুদণ্ডের রায় আসার পর সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারও মোশাররফের পক্ষে অবস্থান নেয়। বিশেষ আদালতের রায়ে লেখা হয়েছিল, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে মোশাররফের মৃত্যু হলে তার লাশ সংসদ ভবনের সামনে তিন দিন ঝুলিয়ে রাখা উচিত। বিষয়টি সামনে এলে পাকিস্তানজুড়ে তীব্র সমালোচনা হয়। এরপর আরও কড়া অবস্থান দেখায় সেনাবাহিনী।
সেই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যান মোশাররফ ও সরকারের আইনজীবীরা। পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল আনোয়ার মনসুর সরকারের হয়ে মোশাররফের পক্ষে উচ্চ আদালতে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন। মোশাররফের আইনজীবীরা বিশেষ আদালতের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের রায়ে মোশাররফের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড আপনাআপনিই বাতিল হয়ে যাবে কিনা, তা পরিস্কার নয়। এক আইনজীবী বলেছেন, ‘মোশাররফ এখন মুক্ত মানুষ।’ তবে বিবিসির উর্দু বিভাগের খবরে বলা হয়েছে, আরেকটি আদালতে এ মামলার রায় পুনর্বিবেচিত হতে পারে।
১৯৯৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন পারভেজ মোশাররফ। ১৯৯৯ সালে ভারতের সঙ্গে কারগিল যুদ্ধে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকা নিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরে মোশাররফের। এর ধারাবাহিকতায় ওই বছরই সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শরিফকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসেন জেনারেল মোশাররফ। অভিশংসন এড়াতে ২০০৮ সালে পদত্যাগ করেন তিনি। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ শরিফ। ২০১৪ সালের মার্চে জেনারেল মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা শুরু করেন তিনি। ২০১৬ সালে সরকারের অনুমোদনে দুবাই চলে যান মোশাররফ। এখনও সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।