অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫৫:০১,অপরাহ্ন ২৯ মে ২০১৯ | সংবাদটি ৪৭৭ বার পঠিত
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ ১৬ জনকে আসামি করে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এতে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) প্রদানের সুপারিশ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ ফেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। ঘটনার ১ মাস ২১ দিনের মাথায় মামলাটির চার্জশিট দেয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার ঢাকায় পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান। তিনি আরও বলেন, চার্জশিটে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার এই বহিষ্কৃত অধ্যক্ষকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
বাকি আসামিরা হলেন- সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম (৫০), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আফছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মণি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মোহাম্মদ শমীম (২০) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)। পিবিআই প্রধান বলেন, রাফিকে পুড়িয়ে মারার মিশনে সরাসরি অংশ নেন পাঁচজন।
এছাড়া এ হত্যার ঘটনায় বিভিন্নভাবে যারা জড়িত, তাদের আসামি করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন। অভিযোগপত্রেও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি। তিনি বলেন, চার্জশিটে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে আসামি করা হচ্ছে রাফিকে হত্যার ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে। তার নাম থাকছে আসামির তালিকার ১ নম্বরে।
এছাড়া ওই মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন এবং সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম ওই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা নেয়া এবং তা বাস্তবায়নে অর্থসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে উল্লেখ থাকছে অভিযোগপত্রে।
এতে বলা হয়েছে, তদন্তে মোট ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে নুসরাত জাহান রাফিকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করা এবং হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৪(১) ও ৩০ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বনজ কুমার মজুমদার জানান, ২৬ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করেন।
রাফি এর প্রতিবাদ করেন এবং এ বিষয়ে রাফির মা শিরীন আক্তার মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
ওই মামলা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল রাফি ও তার পরিবারকে। কিন্তু মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে রাফির গায়ে আগুন দেয় বোরকা পরা কয়েকজন। আগুনে শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া রাফি ১০ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে মারা যান। তিনি বলেন, রাফির গায়ে আগুন দেয়ার পর ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
রাফির মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আর দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যে মামলার তদন্তভার থানা পুলিশ থেকে দেয়া হয় পিবিআইয়ের হাতে।
মৃত্যুর আগে হাসপাতালে পুলিশকে দেয়া জবানবন্দিতে রাফি তার গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে যান। পরে আসামিরা একে একে গ্রেফতার হতে থাকেন।
আদালতে তাদের দেয়া জবানবন্দি থেকে হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত জানতে পারেন তদন্তকারীরা।
ডিআইজি বনজ কুমার বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা কারাগারে থেকেই রাফির গায়ে আগুন দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে উঠে আসে পিবিআইয়ের তদন্তে।
১৬ আসামির মধ্যে রাফির তিন সহপাঠী কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি ও জাবেদ হোসেন ছাড়াও শাহাদাত হোসেন শামীম ও জোবায়ের আহমেদ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডটি ছিল মিলিটারি প্ল্যানের মতো নিখুঁত। তারা ঘটনাটা ঘটিয়ে জনতার সঙ্গে মিশে গেছে। রাফির গায়ের আগুন নেভাতে সহযোগিতার অভিনয় করেছে। ওই দিন পরীক্ষা ছিল, লোকজন সেভাবে ছিল না। মেইন গেটে দারোয়ান ও পুলিশ ছিল। যে সাইক্লোন সেন্টারের ঘটনা তার গেট আবার মাঠের মধ্যে উল্টো দিকে।
অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় অনেকে রাফিকে চিৎকার করতে দেখেছে। পরে আয়া, বাংলা শিক্ষক, দারোয়ান ও পুলিশ কনস্টেবল সোহেল এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ১১ এপ্রিল কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে গ্রেফতারের পর ১৩ তারিখেই গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছিল যে এটি ছিল একটি খুন। ১৬ জনকেই বিভিন্ন দফায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি তিন দফায় রিমান্ডে ছিল শাহাদত হোসেন শামীম।
সংবাদ সম্মেলনে একটি গ্রাফিক্যাল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে রাফি হত্যার পুরো ঘটনার উপস্থাপন করা হয়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, আমরা মূলত গ্রাফিক্যাল প্রেজেন্টেশনটি তৈরি করেছি তদন্তের বিষয়টি ভালোভাবে বোঝানোর জন্য।
তদন্তে ভবিষ্যতে এ ধরনের জিনিস যুক্ত করা যায় কি না, সেটা মাথায় রেখে পরীক্ষামূলকভাবে এটি করা হয়েছে। বনজ কুমার মজুমদার জানান, ৯ এপ্রিল মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর হয়। ১০ এপ্রিল রাফি বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঘটনার ১ মাস ২১ দিনের মাথায় মামলাটির চার্জশিট দেয়া হচ্ছে। এ মামলায় যারা দোষী তাদেরকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, মোট চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে আসামিরা কাজ করেছেন। এক গ্রুপ হুকুম ও অর্থের জোগান দিয়েছে, আরেক গ্রুপ হত্যা মিশন চালিয়েছে, আরেক গ্রুপ পাহারায় ছিল, আরেকটি গ্রুপ এটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর প্রচেষ্টায় ছিল।
তিনি আরও জানান, রাফির গায়ে আগুন দেয়ার পর তার তিন সহপাঠী পরীক্ষার হলে ঢুকে আলিম পরীক্ষাও দিয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক শাহ আলম তার ৭২২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের আসামি করছেন, তাদের সবাই ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন।
তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলার বাদী রাফির ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানসহ ৯২ জনকে অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হচ্ছে। তার মধ্যে সাতজন আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাফির গায়ে আগুন দেয়ার জন্য কেরোসিন তেল বহনের কাজে ব্যবহৃত পলিথিন, রাফির গায়ে সেই কেরোসিন ছিটানোর কাজে ব্যবহৃত একটি কাচের গ্লাস, দেশলাইয়ের কাঠি, তিনটি কালো রঙের বোরকা, আসামি শামীমের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন, আসামি রুহুল আমিনের সঙ্গে তার কথোপকথনের রেকর্ড এবং অধ্যক্ষের অপকর্মের বিবরণ লেখা নুসরাত জাহান রাফির ডায়েরি এ মামলার আলামত হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
পিবিআই প্রধান বলেন, রাফি মাদ্রাসার সব অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। তাই সবাই (আসামিরা) মিলে রাফিকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে পরস্পর লাভবান হওয়ার জন্য।
বিভিন্ন সময়ে মাদ্রাসায় ছাত্রী নির্যাতন, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, প্রশ্ন দেয়া, মাদ্রাসা থেকে অবৈধ আয়ের ভাগবাটোয়ারা এদের (আসামিদের) মধ্যেই হতো।
পিবিআই প্রধান বলেন, কারাগারে সিরাজ উদ্দৌলার কাছ থেকে রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার হুকুম আসে। ৩ এপ্রিল শাহাদাত নুর উদ্দিন হাফেজ আবদুল কাদেরসহ কয়েকজনকে নিয়ে জেলখানায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার সঙ্গে দেখা করে। সেখানে সিরাজ উদ্দৌলা নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা এবং এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।
৪ এপ্রিল পরিকল্পনা মোতাবেক মাদ্রাসার পাশের টিনশেড কক্ষে আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম, নুর উদ্দিন, জোবায়ের, জাবেদ, পপি ও কামরুন্নাহারসহ আরও কয়েকজন রাফিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কীভাবে কে কী করবে তার পুরো পরিকল্পনা সাজায় শামীম। সে কাউন্সিলর মাকসুদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়।
যে টাকা দিয়ে বোরকা ও কেরোসিন কেনা হয়। সে ৫ এপ্রিল ভূঁইয়াবাজার থেকে এক লিটার কেরোসিন তেল কিনে নিজের কাছে রেখে দেয়। তার জবানবন্দি অনুযায়ী পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বোরকা ও রাফির গায়ে কেরোসিন ঢালতে ব্যবহৃত গ্লাস উদ্ধার করা হয়।
৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টায় শাহাদাত, নুর উদ্দিন, হাফেজ আবদুল কাদের মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আসে এবং পরিকল্পনা মোতাবেক সকাল ৮টা থেকে ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে যে যার মতো অবস্থান নেয়।
শাহাদাত পলিথিনে করে নিয়ে আসা কেরোসিন তেল ও অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে থেকে একটি কাচের গ্লাস নিয়ে ছাদের বাথরুমের পাশে রেখে দেয়। হত্যাকাণ্ডের আগে যে কক্ষে বোরকা রাখা ছিল, সেটি পরিদর্শন করে আসে নুর উদ্দিন। ঘটনার সময় ভবনের নিচের পরিস্থিতিটা খুব চতুরতার সঙ্গে সামলে নেয় সে। পুরোটা সময় নাটকের মতো চিত্রায়ন করতে সহায়তা করে সে।
তিনি আরও জানান, কামরুন্নাহার মণির কেনা দুটি ও বাড়ি থেকে নিয়ে আসা একটি মোট ৩টি বোরকা ও ৪ জোড়া হাতমোজা নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারের তৃতীয় তলায় রাখে।
শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ ও জোবায়ের বোরকা ও হাতমোজা পরিধান করে তৃতীয় তলায় অবস্থান করে। রাফি পরীক্ষা দিতে এলে পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্বে অবস্থান করা উম্মে সুলতানা পপি গেটেই রাফিকে তার বান্ধবীকে মারধরের কথা বলে। এ খবর জানতে পেরে রাফি পরীক্ষার হলে ফাইল রেখে দৌড়ে ছাদে যেতে থাকে। রাফি তৃতীয় তলার ছাদে পৌঁছলে উম্মে সুলতানা পপি রাফিকে সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বলে এবং ভয় দেখায়।
রাফি মামলা তুলবে না বলে জানালে আসামি কামরুন নাহার মণি, শাহাদাত হোসেন শামীম, জোবায়ের ও জাবেদ রাফির পেছনে ছাদে যায়। ছাদে তারা রাফিকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। তখন রাফি অস্বীকৃতি জানালে শাহাদাত বাম হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে এবং ডান হাত দিয়ে রাফির হাত পেছন দিকে নিয়ে আসে।
উম্মে সুলতানা পপি রাফির গায়ের ওড়না খুলে জোবায়েরকে দিলে সে ওড়না দু’ভাগ করে ফেলে। ওড়নার এক অংশ দিয়ে পপি ও মণি রাফির হাত পেছনে বেঁধে ফেলে, অন্য অংশ দিয়ে আসামি জোবায়ের পা প্যাঁচিয়ে ফেলে, জাবেদ পায়ে গিঁট দেয়। সবাই মিলে রাফিকে ছাদের ফ্লোরে ফেলে দিলে শাহাদাত রাফির মুখ ও গলা চেপে রাখে।
কামরুন নাহার মণি রাফির বুকের ওপর চাপ দিয়ে ধরে এবং উম্মে সুলতানা পপি ও জোবায়ের পা চেপে ধরে। জাবেদ পাশের বাথরুমে লুকানো কেরোসিনের পলিথিন থেকে কাচের গ্লাসে কেরোসিন নিয়ে নুসরাতের পুরো গায়ে ঢেলে দেয়। শাহাদাতের ইশারায় জোবায়ের ম্যাচ দিয়ে রাফির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এরপর গ্লাসটি রাফির হাতে গুঁজে দেয়া হয়েছিল- যাতে সে আত্মহত্যা করেছে বলে চালিয়ে দেয়া যায়।
পিবিআই প্রধান আরও জানান, আগুন ধরিয়ে প্রথমে জোবায়ের ছাদ থেকে নামে, এরপর উম্মে সুলতানা পপি ছাদ থেকে নেমে যেতে থাকে। ওই সময় পূর্বের শিখানো মতে কামরুন নাহার মণি উম্মে সুলতানা পপিকে ‘কাম কাম চম্পা/শম্পা’ বলে ডেকে নিচে নেমে যায়। কামরুন নাহার মণি ও উম্মে সুলতানা পপি নিচে নেমে পরীক্ষার হলে ঢুকে যায়।
এরা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দেয়। জাবেদ ও শাহাদাত হোসেন শামীম সাইক্লোন শেল্টারের ৩য় তলায় গিয়ে বোরকা খুলে ফেলে। জাবেদ শাহাদাতকে তার বোরকা দিয়ে নিজেও পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করে। শাহাদাত হোসেন শামীম নেমে মাদ্রাসার বাথরুমের পাশ দিয়ে চলে যায় ও মাদ্রাসার পুকুরে বোরকা ফেলে দেয়।
আসামি জোবায়ের সাইক্লোন শেল্টার থেকে নেমে মাদ্রাসার মূল গেট দিয়ে বের হয়ে যায় এবং বোরকা ও হাতমোজা সোনাগাজী কলেজের ডাঙ্গি খালে ফেলে দেয়। নুর উদ্দিন সাইক্লোন শেল্টারের নিচে থেকে পুরো ঘটনার তদারকির দায়িত্ব পালন করে। মহিউদ্দিন শাকিল ও মোহাম্মদ শামীম সাইক্লোন শেল্টারের দুই সিঁড়ির সামনে পাহারা দেয়।
মাদ্রাসার মূল গেটের পাশে ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, আবদুর রহিম শরীফ ও হাফেজ আবদুল কাদের পাহারা দেয়। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পর সবাই নিরাপদ স্থানে সরে গিয়ে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালায়।
তিনি বলেন, ঘটনার পর মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে পুলিশ প্রশাসন সবকিছু ম্যানেজ করার আশ্বাস দেন আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন।
হত্যাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করেন তিনি। তাছাড়া ঘটনার পর শামীমের সঙ্গে দুই দফা ফোনে কথা বলে সবকিছু নিশ্চিত হন রুহুল। কাউন্সিলর মাকসুদ আলম সম্পর্কে পিবিআই প্রধান বলেন, ২৮ মার্চ সিরাজের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেন কাউন্সিলর মাকসুদ। শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে না থাকলে আইসিটি পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার হুমকি দিতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন। হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি ১০ হাজার টাকা দেন।
ঘটনার সবকিছু জানলেও ঘটনার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে ফেনীতে অবস্থান করছিলেন তিনি (মাকসুদ)।
বনজ কুমার বলেন, রাফি অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নিচে নেমে আসার সময় দুঃখজনক হলেও সত্য যে শরীরে কাপড় দেখা যায়নি। পুড়ে গেছে। শরীর থেকে মাংস খুলে খুলে পড়ছিল।
গেটে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল ও নাইটগার্ড আগুন নিভায়। হত্যায় জড়িত নুর উদ্দিন ও হাফেজ আবদুল কাদেরও রাফির গায়ে পানি দেয় এবং ভাই নোমানকে ফোনে সংবাদ দেয়।
বনজ কুমার বলেন, ঠাণ্ডা মাথায় এই হত্যায় চারটি শ্রেণীপেশার মানুষকে অংশ নিতে দেখা যায়। শিক্ষক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, স্থানীয় সরকার প্রশাসন এবং শিক্ষার্থী। খুনের পর ঠাণ্ডা মাথায় পরীক্ষাও যে দেয়া সম্ভব, তা ভাবনাতীত।
সৌজন্য – যুগান্তর