থাইল্যান্ডের গোল্ডেন টয়লেট
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৩৫:৫২,অপরাহ্ন ২৫ এপ্রিল ২০১৯ | সংবাদটি ৪১৬ বার পঠিত
গোল্ডেন ঘরটি দেখে প্রথমে দর্শনার্থীরা আন্দাজ করতেই পারেন না, এটি একটি টয়লেট। যখন জানতে পারেন এটি টয়লেট, তখন এর সঙ্গে সেলফি তোলার হিড়িক পরে যায়।এমন ‘গোল্ডেন টয়লেটে’র দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে উত্তর থাইল্যান্ডের চিয়াংরাই শহরে। এই শহরের সঙ্গে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। গতবছর বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখ ছিল এই শহরের দিকে। গুহায় আটকে পড়া থাই কিশোর ফুটবলারদের বাড়ি এই চিয়াংরাই প্রদেশেই। তখন গণমাধ্যমে হাজারবার এসেছিলো এ প্রদেশটির নাম।
গতবছর বেড়াতে গিয়েছিলাম সেখানে। গিয়েছিলাম সাদা ও নীল মন্দির দেখতে। সাদা ও নীল মন্দির এ শহরের মূল পর্যটন আকর্ষণ। এ বৌদ্ধ মন্দির দুটি দেখতে প্রচুর বিদেশি পর্যটকরা আসেন এ শহরে। এখান থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার পথ পেরোলেই থাই-মিয়ানমার বর্ডার। যেহেতু মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ তাই বুঝতেই তো পারছেন জায়গাটি বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি দূরে নয়। একসময়ের কুখ্যাত আফিম কারবারীদের আন্তর্জাতিক রোড ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’ খ্যাত জায়গাটিও চিয়াংরাই প্রদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ, থাই-মিয়ানমার ও লাউস বর্ডার এসে মিলেছে যেখানে। সে এক দীর্ঘ গল্প। সময় পেলে আরেকদিন বলবো।
শহর থেকে সীমান্তগামী বাসে চেপে নেমে গেলাম কয়েক কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে পাঁচ মিনিটের পথ হেঁটেই সাদা মন্দির। নীল মন্দির এটির কাছাকাছিই পড়ছে। খুব সকাল সকাল পৌঁছে গিয়েছিলাম। তখনও ভিড় জমেনি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনা পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখলাম সেখানে।সাদা মন্দিরের পাশে গোল্ডেন ঘরটি দেখে প্রথমে এটিকে গোল্ডেন মন্দির, ভাবলাম মনের ভুলে। কারণ এমন গোল্ডেন ঘরের দেখা মেলে প্ৰায়ই থাইল্যান্ডে। প্রাকৃতিক জরুরত না আসলে জানাই হতো না গোল্ডেন এ টয়লেটটির কথা। মিস করেই ফেলছিলাম অল্পের জন্য। ছবির গোল্ডেন ঘরটির পুরোটাই একটি টয়লেট। মধ্য-অংশে নারীদের টয়লেট।আর দুই পাশে পুরুষ টয়লেট। এক দিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসা যায়।মনের মাঝে একটা প্রশ্ন জাগলো, সাদা টেম্পলের পাশে এমন গোল্ডেন টয়লেট নির্মাণের যুক্তি কতটুকু সঠিক ছিল? এটা এখানকার কর্তৃপক্ষই হয়তো ভালো বুঝবেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, টয়লেটটির কথা জানার পর টেম্পলের চেয়ে টয়লেটের সঙ্গে পর্যটকদের বেশি ছবি ও সেলফি তুলতে দেখলাম। সাদার চেয়ে গোল্ডেনের প্রতি যে মানুষের আকর্ষণ বেশি সেটাই দেখলাম।আসলে আমাদের জীবনে টয়লেটের গুরুত্বের কথা আমার এখানে লেখার প্রয়োজন হবে না মনে হয়। গোপাল ভাঁড়ের গল্প পড়লেই এর গুরুত্বের আন্দাজ পাওয়া যাবে। গতবছর থাইল্যান্ড যাওয়ার পথে আকাশে চীনা বিমানে বসে বসে ভারতীয় সিনেমা ‘টয়লেট’ দেখলাম। দারুণ লেগেছিল মুভিটা। সবার বাড়ি বাড়ি টয়লেট থাকা উচিৎ আমি এর পক্ষে।
টয়লেট নিয়ে আমার আরেকটি ছোট গল্প আছে, বলেই ফেলি, যদি আরেকদিন সময় না হয়! বাজারে বা বড় শপিংমলে গেলে আমরা দেখতে পাই পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে। প্রতিবন্ধীদের জন্যও বিশেষ টয়লেটের দেখা যায়। কিন্তু, এই প্রথম থাইল্যান্ডের এক শপিংসেন্টারে আমি শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা টয়লেট দেখলাম। ব্যাপারটি চমৎকার লাগলো আমার কাছে।যেহেতু শিশু টয়লেট তাই ঢুকতে মানা কিসের! ভেতরে গিয়ে চমকে যাই আমি। লেগোর তৈরি শিশুদের চেয়ার-টেবিল রাখা হয়েছে ভেতরে। রাখা হয়েছে লেগোর তৈরি খেলনা সামগ্রী। শিশুরা খেলে খেলে বিভিন্ন কার্টুনের ছবি দেখে দেখে টয়লেট সারতে পারে। সত্যিই চমৎকার, তাই না? আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যৎ একথা আমরা মুখে মুখে বললেও বাস্তবে শিশু বিকাশে কতটুকু সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি আমরা তাদের? সত্যিই এদিক দিয়ে থাই-রা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।